—প্রতীকী চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডে তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য দফতরে অনিয়মের নানা অভিযোগ উঠছে। এই পটভূমিতে স্কুলে বদলি নিয়েও নানা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তার তদন্ত চাইলেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশ।
শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের বদলির সময়ে সংরক্ষণের নিয়ম মানা হয়নি— এই অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্টস্কুলগুলির পরিচালন সমিতির কাছ থেকে ভুল হয়েছে বলে মুচলেকা চেয়েছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধেই এ বার সরব হয়েছেনএকাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, মুচলেকা তাঁরা দেবেন না। উল্টে তাঁদের অভিযোগ, সংরক্ষণের নিয়ম না মেনে স্কুলে বদলির ক্ষেত্রেঅনিয়মের পিছনে দায়ী শিক্ষা দফতরই। এমনকি, নিয়ম বহির্ভূত বদলির পিছনে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তুলছেন প্রধান শিক্ষকদের একাংশ।
কেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেনশিক্ষকদের একাংশ। কারণ তাঁদের দাবি, স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগকর্তা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাই কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায় পর্ষদের।যদিও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘২০১৮ সাল থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগকর্তা। কিন্তু তার আগে নিয়োগ দিত স্কুলের পরিচালন সমিতি। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণদফতর ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্কুলের পরিচালন সমিতিগুলিকে মুচলেকা দেওয়ার কথা বলেছে। অর্থাৎ, ২০১৮ সালের আগের নিয়োগেসংরক্ষণের নিয়ম না-মানার কথা বলা হয়েছে।’’
যদিও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই যুক্তি মানতে নারাজ স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ।‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘২০১৮ সালের আগে স্কুলের পরিচালনসমিতি নিয়োগ দিলেও ওই প্রার্থী সুপারিশ পেতেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের থেকে,নিয়োগপত্র পেতেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের থেকে। সেই নিয়োগপত্র নিয়ে স্কুলে এক জন প্রার্থী এলে তাঁকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হত স্কুলেরপরিচালন সমিতি। তখন সমিতির কিছু করার থাকত না। তাই মধ্যশিক্ষা শিক্ষা পর্ষদ এর দায় এড়াতে পারে না।’’ সৌদীপ্তের অভিযোগ, বদলির ক্ষেত্রেও অনিয়ম খুবপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। ২০১৫ সালে স্কুল শিক্ষা দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েজানিয়েছিল যে, স্কুলে বদলির ক্ষেত্রে কোনও সংরক্ষিত প্রার্থীর জায়গায় সাধারণ প্রার্থী স্কুলে এলে তখন তাঁকেই নিয়ে নিতে হবে এবং পরবর্তী কালে রস্টার অনুযায়ী বিষয়টিঠিক করে নিতে হবে। কিন্তু অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে যে, পরবর্তী কালে সেটি ঠিক হয়নি। অর্থাৎ ‘বদলির রস্টার’ মেনে এইসব বদলি হয়নি। রস্টার না মেনে বদলিগুলির অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছিল।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দনমাইতির দাবি, ‘‘২০১৮ সালের পরে এই অনিয়ম সব থেকে বেশি হয়েছে উৎসশ্রীর মাধ্যমে বদলির সময়ে। আমরা বলেছি, কোনও ধরনেরমুচলেকা যেন শিক্ষকেরা না দেন। বরং আমাদের প্রশ্ন, মেডিক্যাল কারণ দেখিয়ে শিক্ষকদের যে বিশেষ বদলিগুলি হয়েছে, সেখানে ভূরি ভূরি অনিয়ম হয়েছে। বদলির কোনও রস্টারও মানা হয়নি। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এইসব বদলি হয়েছে। করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থাতেও বহু বদলি নিয়ম বহির্ভূত ভাবে হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বদলি করে তার তথ্যপ্রমাণও লোপাটকরা হয়েছে। এই অনিয়মের অভিযোগ করে তার তদন্তেরদাবিতে আমরা শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়েছি।’’