গার্ডেনরিচের বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে আরও সময় লাগতে পারে। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচের বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে আরও সময় লাগতে পারে। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা সূত্রে এমনটাই খবর। গত ১৭ মার্চ, রবিবার রাতে গার্ডেনরিচের একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গড়ে রিপোর্ট তলব করেছেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, কমিটি গঠনের সাত দিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেবে কমিটি। পুরসভার তদন্ত কমিটি যে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে, তাতে নির্মাণ সামগ্রীর মান ও বাড়ি তৈরির পদ্ধতি লঙ্ঘনের বিষয়টি থাকতে পারে। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে সময় লাগতে পারে আরও তিন সপ্তাহ।
আপাতত বুধবার অন্তর্বর্তিকালীন রিপোর্ট মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হতে পারে বলেই পুরসভা সূত্রে খবর। আর রিপোর্ট তৈরিতে বিলম্বের কারণ প্রসঙ্গে পুরসভা থেকে জানা যাচ্ছে, ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই পুরসভার তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মাটি ও নির্মাণ সামগ্রীর মান পরীক্ষার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়। কাজ শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুরসভার তদন্ত কমিটির সদস্যরা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলটি। প্রায় ৮ ফুট উঁচু হয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মাটির কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। নমুনা সংগ্রহের পর সেই মাটি পরীক্ষা করা হবে। মাটির রিপোর্ট আসতে সময় লাগতে পারে প্রায় তিন সপ্তাহ।
এ ছাড়াও একঝাঁক প্রশ্ন তুলেছে তদন্ত কমিটি। যেমন বাড়িটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সুরক্ষাবিধি মানা হয়ছিল কি না? বাড়ির প্রধান স্তম্ভগুলিতে মাত্র ১০ মিমি ব্যাসের রড ব্যবহার করা হয়েছিল কি? ভিত নির্মাণ সঠিক ছিল কি না? এমনকি, মাটির উপরে বাড়ির যে কাঠামো তৈরি হয়েছিল, তাতেও গোলমাল ছিল কি? এমন সব প্রশ্নের জবাব মেলার পরেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তে নিরপক্ষেতার স্বার্থে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়নি বিল্ডিং বিভাগের কোনও আধিকারিক বা ইঞ্জিনিয়ারকে। কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরাও চাই সময় নিয়ে এই দুর্ঘটনার তদন্ত করুক পুরসভা। এ দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা প্রকাশ্যে আসা জরুরি।’’ ইতিমধ্যে বিল্ডিং বিভাগ থেকে একঝাঁক আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে তিন জন ইঞ্জিনায়রকে শো-কজ় করা হয়েছিল। তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জবাব দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হয়নি কলকাতা পুরসভা।