আরাধনা: পুজো শুরু ট্যাংরার শীল লেনের দাসবাড়িতে। সোমবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পটুয়াপাড়ায় প্রতিমায় তুলির শেষ টান এখনও পড়েনি। তার মধ্যেই সোমবার খাস কলকাতার একটি বাড়িতে বোধন হয়ে গেল দেবী দুর্গার। আগামী ১৮ দিন ধরে চলবে এই দুর্গাপুজো।
কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথির আদ্রা নক্ষত্র মেনে শুরু হওয়া এই পুজো অবশ্য পুরনো নয়। বয়স মাত্র ১২ বছর। ট্যাংরার শীল লেনের দাস পরিবারের বাড়ি এ দিন সকাল থেকেই গমগম করছে লোকজনের আনাগোনায়। বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দারা আনন্দ পালিত রোডে থাকলেও পুজো হয় শীল লেনে, দাসদের দুই পুরুষের আদি বাড়িতেই। সেখানে বাড়ির দেবতা রাধা-কৃষ্ণের ঘরের পাশেই দুর্গাপুজোর জায়গা।
সারা বছর রাধাকৃষ্ণের পুজো করেন অন্য পূজারী। দুর্গাপুজোয় অবশ্য পুরোহিতের ভূমিকায় থাকেন বাড়ির একমাত্র ছেলে, পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রসেনজিৎ দাস। আগে পূজারী হিসেবে যোগ দিতেন তাঁর দিদি, পেশায় চিকিৎসক মৌমিতা দাসও। বিয়ের পরে অবশ্য মৌমিতা আর ওই ভূমিকায় থাকেন না। সোমবার বছর আটত্রিশের প্রসেনজিৎবাবু জানালেন, ১১ বছর আগে তিনি আর দিদি মিলে ঠিক করেন দুর্গাপুজো করবেন। তবে মহাপুজো নয়। তাঁরা পুজো শুরু করবেন কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে। আরও ঠিক করেন, পুজোর সব কাজ করবেন নিজেরাই।
প্রসেনজিৎ জানান, প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি তিনি এবং মৌমিতা সংস্কৃত শিখতে শুরু করেন। কিন্তু ভাষা শিখে নিলেও পুজোর রীতি-প্রথা জানা সম্ভব ছিল না তাঁদের পক্ষে। তাই প্রসেনজিৎ স্থির করেন পুরাণ, বেদ এবং উপনিষদ পড়বেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার শেষে তিনি চলে যান বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শেখেন বেদ। এর পরেই শুরু হয় দাস পরিবারের দুর্গাপুজো।
সোমবার সকালে আদ্রা নক্ষত্রের অবস্থান দেখে হয়ে গিয়েছে বোধন। প্রসেনজিৎবাবু জানালেন, বেশ কিছু জায়গায় মূলত স্মৃতিকার রঘুনন্দনের তত্ত্ব মেনে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। কিন্তু তাঁদের পুজো হয় স্মৃতিকার শূলপাণির মতে। তবে সোমবার বোধন হলেও সপ্তমী পর্যন্ত পুজো হবে বাড়ির দেবতার নিত্যপুজোর মতো করে। সপ্তমী থেকে শুরু মহাপুজো। তখন অঞ্জলি, হোম, বলি-সহকারে মহাপুজোর সমস্ত নিয়ম মানা হয়। ১৮ দিন ধরে চণ্ডীপাঠ এবং বেদপাঠ।