আহত সৈকত চক্রবর্তী। রবিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
ফের চিনা মাঞ্জা। ঘটনাস্থল সেই মা উড়ালপুল। এবং জখম এক স্কুটি আরোহী। আবারও প্রমাণ হল, মা উড়ালপুলের উপরে চিনা মাঞ্জার ‘মৃত্যুফাঁদ’ রয়েই গিয়েছে।
রবিবার দুপুরে মা উড়়ালপুল ধরে মুকুন্দপুর যাওয়ার পথে ঘুড়ির সুতোয় চোখের নীচ বরাবর ধারালো কিছুর টান প়ড়তেই ব্রেক কষে স্কুটি থামিয়ে দিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার সৈকত চক্রবর্তী। তার পরেই দেখেন, চোখের নীচ থেকে নাকের উপর পর্যন্ত কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। কোনও রকমে স্কুটি থামিয়ে নেমে পড়েন সৈকতবাবু। রুমাল দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেন। বুঝতে পারেন, ঘুড়ির সুতোয় কেটে গিয়েছে চোখের নীচ থেকে নাকের উপর পর্যন্ত। ফোন করে সৈকতবাবু কোনও ভাবে ডেকে পাঠান হাসপাতালেরই এক সহকর্মীকে। তত ক্ষণে তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে আর এক মোটরবাইক চালক তাঁর গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে। তিনিই ১০০ ডায়ালে ফোন করে লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে খবর দেন। প্রাথমিক ভাবে জল দিয়ে সৈকতবাবুকে সাহায্য করেন।
লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকে খবর যায় কড়েয়া থানায়। এর পরেই পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে সৈকতবাবুকে উদ্ধার করে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। তত ক্ষণে সৈকতবাবুর সহকর্মীরাও পৌঁছে যান এবং এসএসকেএমের জরুরি বিভাগ থেকে তাঁকে ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করে
সেলাই করেন।
পরে সৈকতবাবু জানান, তিনি এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ স্কুটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন মুকুন্দপুরের নয়াবাদে বাড়ি যাওয়ার জন্য। মাথায় হেলমেট থাকলেও ‘ভাইসার’ (হেলমেটের সামনে শক্ত কাচের আবরণ) তোলা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘দুপুরে বাড়িতে খেতে যাচ্ছিলাম। পার্ক সার্কাস থেকে মা উড়ালপুলে ওঠার পরে কিছু দূর এগিয়েছি। হঠাৎ বাঁ চোখের নীচে ধারালো কিছুর টান প়ড়তেই ব্রেক কষে স্কুটি থামিয়ে দিই। প্রথমে বুঝতে পারিনি। তার পরেই দেখি সুতোর মতো একটা জিনিস। চোখ দু’টো ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছে।’’ নিয়মিত ওই উড়ালপুল ধরে সৈকতবাবু বাড়ি এবং হাসপাতালে যাতায়াত করেন। শুনেছেন, চিনা মাঞ্জা থেকে এর আগেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তিনি যে নিজে এ ভাবে ক্ষতবিক্ষত হবেন, তা ভাবেননি।
এর আগে চলতি বছরের অক্টোবরে মা উড়ালপুলেই গলায় সুতো আটকে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন বেলুড়ের বাসিন্দা সুরেশ মজুমদার। সুরেশবাবু পুরো হেলমেট পরে বাইক নিয়ে রুবি থেকে মা উড়ালপুল ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময়ে চিনা মাঞ্জা আটকে তাঁর গলা কেটে যায়। ওই ব্যক্তি ছাড়াও মা উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জার ফাঁদে পড়ে গলা, হাতের তালু এবং আঙুল কেটেছিল শিবপুরের সৌপর্ণ দাশের। একের পর এক আরোহী জখম হওয়ার পরেও মা উড়ালপুলের আশপাশে যে চিনা মাঞ্জার ব্যবহার এখনও বন্ধ হয়নি, তা ফের প্রমাণ হল রবিবার সৈকতবাবুর দুর্ঘটনায়।