একটি পারিবারিক সম্পত্তিবিক্রির ঘটনায় এক ‘বাংলাদেশি নাগরিক’-এর যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। প্রতীকী ছবি।
একটি পারিবারিক সম্পত্তিবিক্রির ঘটনায় এক ‘বাংলাদেশি নাগরিক’-এর যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি বিধাননগর পুর এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানকার সন্তোষপল্লির পূর্বাশা এলাকার ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করে স্থানীয় পুর প্রতিনিধি নিজেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। তদন্ত শুরু করেছে বাগুইআটিথানার পুলিশ।
যাঁদের জমি ঘিরে এই অভিযোগ, সেই পরিবারের দুই সদস্য রবীন্দ্রনাথ সাহা ও সরস্বতী সাহা জানান, তাঁদের একটি তিন কাঠার পারিবারিক জমি রয়েছে। যেটির তিন জন মালিকের এক জন প্রয়াত। সেই প্রয়াত ব্যক্তির সন্তানেরা হলেন রবীন্দ্রনাথ ও সরস্বতী। ওই দুই ভাইবোন পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে লিখিত আকারে জানিয়েছেন, যে তাঁরা জমি বিক্রি করতে চাননি। তাই পার্টিশন ডিড তৈরি করে অন্য দুই শরিক নিজেদের অংশ বিক্রি করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ও সরস্বতীর অভিযোগ, ‘‘আমাদের উপরে জোর খাটিয়ে একটি ক্লাবে আটকে রেখে পার্টিশন ডিডে সই করানো হয়েছে। আমাদের অংশের কাগজপত্রও আটকে রাখা হয়েছে।’’ তাঁরা জানান, ডিসেম্বরে পার্টিশন ডিড এবং ফেব্রুয়ারিতে জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে।পেশায় চা বিক্রেতা রবীন্দ্রনাথ তাঁর অভিযোগে লিখেছেন, ‘‘আমার দুই কাকা নীহাররঞ্জন ও বীরেন্দ্রনাথ। বীরেন্দ্রনাথ বাংলাদেশের বরিশালের পিরিচপুরের বাসিন্দা। নীহাররঞ্জন জাল কাগজপত্র তৈরি করে বীরেন্দ্রনাথকে এখানকার বাসিন্দা সাজিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। স্থানীয় এক জনের সাহায্য নিয়ে আমাদের জোর করে ওই ডিডে সই করানো হয়েছে।’’
ঘটনাটি জানাজানি হতেই হইচই শুরু হয়েছে পূর্বাশা এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ নাগ ঘটনার তদন্ত চেয়ে বাগুইআটি থানার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রিতে যে আধার কার্ড দেখানো হয়েছে, সেটি অনুযায়ী বীরেন্দ্রনাথ এখানকার বাসিন্দা। আদতে তা নয়। উনি বাংলাদেশের নাগরিক। তা সত্ত্বেও উনিভুয়ো নথিপত্র পেশ করে এখানে এসে জমি বিক্রি করে চলে গিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ ঘটনার তদন্ত যাতে শক্ত হাতে করা হয়, সে জন্য প্রসেনজিৎ বিধাননগরের নগরপালকেও চিঠি লিখছেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, ঘটনা জানাজানির পরে তাঁরা নীহাররঞ্জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বীরেন্দ্রনাথ বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই তো বাংলাদেশি। বীরেন্দ্রনাথ কোথায় থাকেন, কোথায় আছেন জানি না। শুনেছি অশোকনগরের দিকে থাকেন।’’ এর বেশি তিনি কিছু জানাতে চাননি।
ইতিমধ্যেই ওই জমি পরিদর্শন করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। এমনকি নীহাররঞ্জনকে পুলিশনির্দেশ দিয়েছে, তাঁর ভাইকে হাজির করানোর জন্য। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ দেশের নাগরিকত্ব না থাকলে এখানের কোনও রেজিস্ট্রিতে সই করা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এ ভাবে ভুয়ো কাগজপত্র দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলে এ দেশে অনুপ্রবেশকারীরা বসবাস করতে চলে আসে। সে সব ঠেকাতেই নানা ধরনের বিদেশনীতি সংক্রান্ত আইন রয়েছে। এই ঘটনা সত্যি প্রমাণিত হলে আইনত তা মারাত্মক অপরাধ।’’