আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে দোলের দিন কলকাতা পুলিশের মামলা করার খতিয়ান। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার, দোলের রাত ১২টা পর্যন্ত মামলা রুজু হয়েছে মোট ৭৬০টি।
বিধি উড়িয়ে: এক স্কুটারে সওয়ার চার জন। হেলমেট পরার বালাই নেই কারও। শনিবার, আহিরীটোলার কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ঝড়ের গতিতে পাশাপাশি চলেছে তিনটি বেপরোয়া মোটরবাইক। কোনওটিতে সওয়ার তিন জন, কোনওটিতে আবার চার জন। না আছে মস্তিষ্কে নিয়ন্ত্রণ, না আছে দু’হাতে। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। নেই সিগন্যাল মানার বোধও!
শুক্রবার, দোলের দিন, শহরের পথে এমনই বেপরোয়া মোটরবাইক ও গাড়ির দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। যা দেখে অনেকেরই বক্তব্য, সচেতনতার লাগাতার প্রচার বা জরিমানার অঙ্ক বিপুল হারে বৃদ্ধি— কোনও কিছুই পাল্টাতে পারেনি এক শ্রেণির চালকদের। তাঁদের সেই বেপরোয়া আচরণের জেরেই সারা দিনে শহরে একাধিক পথ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। চারটি ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা রুজু করে দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়ি আটক করেছে। তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেশ কয়েকটি ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা মিলেছে বলে খবর।
আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে দোলের দিন কলকাতা পুলিশের মামলা করার খতিয়ান। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার, দোলের রাত ১২টা পর্যন্ত মামলা রুজু হয়েছে মোট ৭৬০টি। এর মধ্যে হেলমেট না পরার কারণে মামলা রুজু হয়েছে ২৮৭টি। একই বাইকে দু’জনের বেশি সওয়ারি থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ১৫৮টি ক্ষেত্রে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ফের সেঞ্চুরি করেছে। মোট মামলা হয়েছে ১৮৫টি। পুলিশেরই একাংশের প্রশ্ন, জরিমানার অঙ্ক এত বাড়ানোর পরেও কেন হুঁশ ফিরছে না? কেউ কেউ এ-ও বলছেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে কড়া হতে লাইসেন্স সাসপেন্ডের পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। তাতেও ভয় নেই দেখে অবাক লাগছে।’’
অভিযোগ, এই ভয় না থাকার নজির দোলের দিন সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে রবীন্দ্র সরণি ও বিধান সরণিতে। দুপুর থেকেই সেখানকার বেশ কয়েকটি শরবতের দোকানের বাইরে বেপরোয়া মোটরবাইকের এমন ভিড় দেখা গিয়েছে, যা সরাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। গিরিশ পার্ক মোড়ে এমনই দু’টি মোটরবাইকের সঙ্গে একটি গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে দুপুর আড়াইটে নাগাদ। কারও আঘাত গুরুতর না হলেও একটি মোটরবাইকের এক দিক দুমড়ে গিয়েছে। রবীন্দ্র সরণিতে পর পর এঁকেবেঁকে চলতে থাকা মোটরবাইকের দলের কাছে বেরোনোর জায়গা চাইতে গিয়ে আবার নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক ট্যাক্সিচালক।
ডায়মন্ড হারবার রোডে দেখা গেল, বেহালা থানার কাছে পুলিশের নাকা-তল্লাশির মধ্যেই বেপরোয়া গতিতে ছুটছে তিনটি মোটরবাইক। যাত্রীদের কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। সাইলেন্সার খুলে ফেলায় সেগুলি থেকে বিকট শব্দ হচ্ছে। দেখেও আটকালেন না? এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘এ ভাবে দৌড়ে ধরতে গেলে তো নিজের বিপদ। আজ যা হওয়ার ক্যামেরায় হবে। মোটা টাকা জরিমানার মেসেজ গেলে তখন বুঝবে।’’ মোবাইলে পাঠানো মেসেজের উপরেই ভরসা করতে দেখা গিয়েছে জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিটের একাধিক পুলিশ চৌকিতে কর্তব্যরত কর্মীদের। ই এম বাইপাসে সিগন্যাল না মেনে দ্রুত চলতে থাকা একটি গাড়ি দাঁড় করানোয় পুলিশকে শুনতে হয়েছে, ‘‘দু’বছর দোল খেলতে পারিনি। এ বার উত্তেজনা ধরে রাখা যাচ্ছে না। জরিমানা করার হলে করুন, দ্রুত ছাড়ুন।’’
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘অন্যান্য বারের তুলনায় এ বারের দোলে শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কম। কড়া হাতে জরিমানা করে সামাল দেওয়া হয়েছে। একই অপরাধে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও এই কড়া ব্যবস্থা সত্ত্বেও আরও একটি দোল উৎসবে বেপরোয়া গাড়ি আর বাইকবাহিনীর দাপট বন্ধ হল না।