মধ্য থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় সোমবার সারা দিন ঘন্টি বাজিয়ে ছুটে বেড়াল দমকলের গাড়ি।
দিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে সকালে গোলপার্কে। একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে গ্যাসের আভেন জ্বালাতে গিয়ে পুরো দোকানটাই ছাই হয়ে যায়। দোকান বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হলেন মালিক রাজেশ চৌরাসিয়া। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। দমকলের চারটি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দোকানের এক কর্মী অজয় দাস। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় দোকানদারেরা জানান, সকাল ১১টা নাগাদ আচমকাই দোকানটি থেকে বাজি ফাটার মতো শব্দ শোনেন তাঁরা। পরমুহূর্তেই দেখা যায়, দাউদাউ করে জ্বলছে দোকানটি। বাড়ির মধ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই ছাদে উঠে যান। দোকানের দোতলায় রাজেশবাবু তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন। স্থানীয় এক দোকানদার বাপী দাস বলেন, ‘‘রাজেশবাবু জ্বলন্ত দোকানে ঢুকে গ্যাস সিলিন্ডারের চাবি বন্ধ করতে গিয়ে পুড়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
দোকানের এক কর্মচারী বিনয় মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা দোকানের অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে হাত লাগাই। তা কাজ না করায় পাশে পেট্রোল পাম্প থেকে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র আনা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।’’ আর এক কর্মচারী মহম্মদ খইরুল বলেন, ‘‘আমি গড়িয়াহাট দমকল কেন্দ্রে খবর দিতে ছুটি।’’ দমকল সূত্রের খবর, প্রথমে গড়িয়াহাট কেন্দ্র থেকে একটি, পরে সদর দফতর থেকে তিনটি ইঞ্জিন যায়। দমকল কর্মীদের অনুমান, গ্যাস সিলিন্ডারে ত্রুটির জন্য এই বিপত্তি। তবে বৈদ্যুতিন গোলযোগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তাঁরা। দমকলের বক্তব্য, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই আগুনের কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।
স্থানীয়েরা জানান, গোলপার্কের এই দোকানটি বহু পুরনো। এখানে স্ন্যাক্স ও চাইনিজ খাবার পাওয়া যায়। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোকানটির মধ্যে থালা-বাসন, সব্জি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। কিছু পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে, আর কিছু আধপোড়া অবস্থায় পড়ে আছে।
এ দিনই দুপুর দে়ড়টা নাগাদ ভবানীপুরের বেণীনন্দন স্ট্রিটে পুলিশ হাসপাতালের গুদামে আগুন লাগে। দমকলের চারটি ইঞ্জিন গিয়ে আধ ঘণ্টায় আগুন নেভায়। দমকল জানিয়েছে, গুদামে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ-সহ কেরোসিন, পাটের দড়ি ছিল। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বাইপাসে একটি রেস্তোরাঁর চিমনি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন যায়। কর্মীরা জানান, সন্ধ্যা থেকে ওই রেস্তোরাঁ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সে কারণে সাড়ে তিনটে নাগাদ রান্নার কাজ শুরু করেছিলেন সাত-আট জন কর্মী। তখনই ওই ঘটনা। দমকলের অনুমান, সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগে।
আগুনের চতুর্থ ঘটনাটি ঘটে দরগা রোডে একটি গাড়ি সংস্থার সার্ভিস সেন্টারে। সেখানকার এক কর্মী বাবলু কুমার বলেন, ‘‘দেড়টা নাগাদ আমরা খেতে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে দেখি, দোতলা থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।’’ দমকলের চারটি ইঞ্জিন হাইড্রলিক মইয়ের সাহায্যে জল ছিটিয়ে ঘণ্টা দু’য়েকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। ক্ষতি হয়েছে একটি গাড়ির। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, সার্ভিস সেন্টারটি চালানোর জন্য দমকল ও পুরসভার যে অনুমতির প্রয়োজন, তা ওই গাড়ি সংস্থার নেই। সে কারণে সংস্থাটির বিরুদ্ধে দমকল ও পুরসভাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।