ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরেই শনিবার সকাল থেকে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। প্রতীকী ছবি।
বান্ধবীর বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন এক তরুণী। সেখানেই মধ্যরাতে চার যুবক তাঁকে মদের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চার জনকে গ্রেফতার করেছে রাজারহাট থানার পুলিশ। আদালত অভিযুক্তদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাটি বিশদে জানার চেষ্টা করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকেরা।
তদন্তকারীরা জানান, নির্যাতিতা তরুণী গড়িয়ার বাসিন্দা। তিনি স্নাতকোত্তরের ছাত্রী। গত বুধবার এক বান্ধবীর সঙ্গে তিনি রাজারহাটের এক বিলাসবহুল রিসর্টের একটি ভিলায় গিয়েছিলেন এক জনের জন্মদিনের পার্টিতে। পার্টি দিয়েছিল ওই তরুণীর বান্ধবীর বন্ধু, যোগেশ মিশ্র নামে এক যুবক। যোগেশ ছাড়াও ঋষিক কুমার, মাধব আগারওয়াল ও শুভম পেরিওয়াল নামে আরও তিন জনকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, তরুণী যে ধর্ষিতা হয়েছেন, মেডিক্যাল পরীক্ষায় তার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা তরুণী অভিযুক্তদের পরিচিত নন। তিনি স্রেফ তাঁর এক বান্ধবীর ডাকে ওই পার্টিতে যান। ওই পার্টিতে সাত জন যুবক ও ছ’জন তরুণী ছিলেন। তার জন্য সেই রিসর্টে একটি ব্যক্তিগত ভিলা ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। নির্যাতিতা তরুণী নিজেও মদ্যপান করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই তরুণী তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁকে মদের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা খেয়ে তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এমনকি, মদ্যপানও তাঁকে জোর করে করানো হয়েছিল বলে পুলিশকে দেওয়া বয়ানে তিনি দাবি করেছেন। পুলিশকে তরুণী জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পরে রাতে বাড়ি ফিরে যান তিনি। পরের দিন ঘটনার কথা তাঁর মাকে বলেন। ওই মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেও তাঁর সময় লেগেছে বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। এর পরে শুক্রবার তিনি রাজারহাট থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের দু’জনকে চিংড়িঘাটা, এক জনকে লেক টাউন এবং অন্য জনকে হরিদেবপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই শনিবার সকাল থেকে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা, গোয়েন্দা-প্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ-সহ একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তা রাজারহাট থানায় গিয়ে দফায় দফায় তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই রিসর্টের যে ভিলায় ওই ঘটনা ঘটে, সেই জায়গাটি পরিদর্শনেও যান পুলিশ আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, অভিযুক্তেরা মদ, মাদক-সহ নানা ধরনের নেশায় অভ্যস্ত।
এ দিন অভিযুক্তদের বারাসতের সিজেএম আদালতে হাজির করায় পুলিশ। সেখানে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা মক্কেলদের জামিনের আবেদন করতে গিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ওই তরুণী ঘটনার দু’দিন পরে পুলিশের কাছে গেলেন কেন? কেন সেই রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। এমনকি, তাঁদের এমনও দাবি, ওই তরুণী এক-এক সময়ে এক-এক রকম কথা বলছেন। যদিও বিচারক অভিযুক্তদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্য মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শাস্তি দেওয়া দরকার। একটি মেয়ে কোনও অচেনা পরিবেশে গেলেই তাকে ধর্ষিতা হতে হবে? এটা কোন ধরনের সমাজ? অভিভাবকেরাও সতর্ক থাকুন তাঁদের সন্তানদের গতিবিধি নিয়ে।’’