প্রতীকী ছবি।
কলকাতার শুল্ক দফতর থেকে তামা কেনার আশায় প্রতারকদের পাল্লায় পড়লেন গুজরাতের দুই ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানায়, কলকাতার শুল্ক দফতর দেড় কোটি টাকার তামা নিলাম করবে বলে খবর পেয়েছিলেন ওই দুই ব্যবসায়ী। সে জন্য দফতরের কমিশনার বলে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি ও তার দলবলকে ২২ লক্ষ টাকা ‘কাটমানি’ দিতে এসেছিলেন তাঁরা। হাওড়ার একটি হোটেলে টাকা দেওয়ার সময়ে প্রতারকেরা অভিনব কায়দায় একই রকম দেখতে দু’টি ব্যাগ বদল করে সমস্ত টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। ওই হোটেলটি হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায়। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার পুলিশ চন্দননগর থেকে অহীন্দ্র রায় নামে এক প্রৌঢ়কে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তেরা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
কমল ভাই নামে গুজরাতের এক বাসিন্দা ৪ ডিসেম্বর গোলাবাড়ি থানায় এসে জানান, তিনি তামার ব্যবসায়ী। তাঁর অংশীদারের নাম আব্দুল রশিদ। সম্প্রতি দিল্লির দুই দালালের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, কলকাতায় শুল্ক দফতরে প্রচুর তামার রড আছে, যা নিলাম হবে। কী ভাবে সহজেই তা কেনা যায়, খোঁজ নিতে শুরু করেন তাঁরা। সেই সূত্রেই দিল্লিতে আলাপ হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে, যে নিজের পরিচয় দেয় কলকাতায় শুল্ক কমিশনারের আপ্ত সহায়ক হিসেবে।
পুলিশ জানায়, এর পরে ওই ব্যক্তি দুই ব্যবসায়ীকে কলকাতায় শুল্ক দফতরের অফিসের সামনে এনে অহীন্দ্রকে শুল্ক কমিশনার হিসেবে পরিচয় করায়। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক পরিচয়ের পরে প্রতারকেরা দুই ব্যবসায়ীর আস্থা অর্জনের জন্য দরপত্র জমা দিতে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার একটি চেক শুল্ক দফতরের কমিশনারের নামে লিখিয়ে নেয়।
এর পরেই ৪ ডিসেম্বর একটি হোটেলে ওই ব্যবসায়ীরা ২২ লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন। সে দিন প্রতারকদের পাঁচ জনই হোটেলে এসেছিল। তাদের সঙ্গে ছিল একটি বড় ও একটি ছোট অ্যাটাচি কেস। ভিতরে ছিল দু’টি একই রকম দেখতে ছোট ব্যাগ। পেশাদার ওই প্রতারকেরা সমস্ত টাকা নেওয়ার পরে প্রথমে বড় অ্যাটাচির ভিতর থেকে একটি ছোট ব্যাগ বার করে। তাতেই সমস্ত টাকা পুরে ফের অ্যাটাচিতে রেখে দিয়ে বলে, সমস্ত তামা লরিতে ওঠা পর্যন্ত ওই টাকা কমল ভাইয়ের কাছেই থাকবে। তার পরে ওই ব্যাগ তারা ফেরত নেবে। কিন্তু পরে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে তারা জানায়, বড় অ্যাটাচিটা তাদের লাগবে। তাই ওটা ফেরত দিয়ে ছোট অ্যাটাচিতে টাকাটা ভরা হোক। এতে কারও সন্দেহ হয়নি। ছোট অ্যাটাচিতে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ভরার ভান করে বড় অ্যাটাচি নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায় পুরো দলটি। তদন্তকারীদের ধারণা, যে ব্যাগে টাকা রাখা হয়েছিল, প্রতারকেরা তেমনই আর একটি ব্যাগ লুকিয়ে এনেছিল। সেটি বদলেই টাকার আসল ব্যাগ নিয়ে পালায় তারা।
রাতে ওই দুই ব্যবসায়ী ছোটেন গোলাবাড়ি থানায়। সেখানে অভিযোগ দায়ের করার পরে হোটেল ও রাস্তার সমস্ত সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করে জানা যায়, দুষ্কৃতীরা একটি গাড়ি নিয়ে এসেছিল। সেই গাড়ির মালিককে জেরা করেই চন্দননগর থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রৌঢ় অহীন্দ্রকে।