অভিনব: সমাবেশে আসা এক মহিলার খোঁপা বিশেষ চিরুনি দিয়ে বেঁধে দিচ্ছেন মহম্মদ রফিক। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়া স্ত্রীর হাতে তৈরি রুটি-তরকারি খেয়ে বেরিয়েছিলেন মহম্মদ রফিক। হাতে ঝোলানো ব্যাগে বিশেষ ধরনের চিরুনি আর ফাইবারের মডেল নিয়ে কল্যাণী-মাঝেরহাট লোকাল ট্রেনে চেপে তাঁর গন্তব্য ছিল ইডেন গার্ডেন্স। উদ্দেশ্য, হেঁটে ধর্মতলায় মঞ্চের আশপাশে পৌঁছে ‘মা-মাটি-মানুষ’ খোঁপা বানানোর চিরুনি বিক্রির।
করোনার কারণে দু’বছর ধর্মতলায় আসা হয়নি শ্যামনগরের লেনিন নগরের রফিকের। বললেন, ‘‘২১ জুলাই এখানে ভাল বিক্রি হয়। ২০১৯-এ শেষ এসেছিলাম। এ বারে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সভার ঘোষণা করতেই রোজগার হবে ভেবেআনন্দ হয়েছিল।’’ বৃহস্পতিবার সভাস্থলের কিছুটা দূরেই এসপ্লানেড মেট্রোর দু’নম্বর গেটের পাশে ভিড়ের মাঝে জায়গা করে নিয়েছিলেনরফিক। ফাইবারের মডেলের কালো-বাদামি চুলে চিরুনির বিভিন্ন মোচড়ে বদলে যাওয়া খোঁপা বানানোর মাঝেই হাঁক, ‘‘মা-মাটি-মানুষ খোঁপার চিরুনি মিলবে মাত্র ২০ টাকায়।’’
শুনেই এগিয়ে এলেন কেশপুরের বিদ্যুৎ জানা, তপন ভুঁইয়া। খোঁপা বানানোর পদ্ধতি পরখ করে কিনি নিলেন ২৫টি চিরুনি। দুই যুবকের কথায়, ‘‘পরিচিতদের উপহার দেব। উনি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও দিয়েছেন। ভিডিয়ো কলে দেখিয়ে দেবেন বলেছেন।’’ মাঝেমধ্যেই হাঁকে বদল আনছিলেন রফিক। ‘এটা নুসরত জাহান খোঁপা। মিমি চক্রবর্তীও আছে।’ নামের বদল কেন? গারুলিয়া পুরসভায় কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়া রেহেনা বেগমের স্বামী রফিক মুচকি হেসে বললেন, ‘‘এঁরা সবাই তৃণমূলেরই।’’ কংগ্রেস সমর্থক রফিক এ বারে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্ত্রীকে প্রার্থী করেছিলেন। ১৩৫টি ভোট পেয়েছিলেন রেহেনা। জয়ী হয় তৃণমূল।
সোজাসাপ্টা ভাবে বললেন, ‘‘১৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকি। সেখানে কেউ কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়াননি। তবে আমরা দিদিকে পছন্দ করি। তাই ভোটটা তাঁকেই দিয়েছিলাম। আমাদের কাউন্সিলরও খুব ভাল।’’ তা হলেস্ত্রীকে কংগ্রেসের প্রার্থী করার কারণ কী? রফিক বললেন, ‘‘সুযোগ এসেছিল তাই পাশের ওয়ার্ডে লড়েছিল।’’ মাইকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরগলা শুনেই থামলেন রফিক। জানালেন, এ বার কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াবেন। কারণ, দুটো। বক্তব্যশোনা এবং অবশ্যই আরও বেশি চিরুনি বিক্রি করা।
বুধবারও সেন্ট্রাল পার্কে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের থাকার জায়গায় ১০০টি চিরুনি বিক্রি করেছেন একাদশ শ্রেণির মুশকানের বাবা রফিক। মেয়ের নামেই নাম ‘মুশকান-চিরুনি’। বিশেষ ছাঁচে ফেলে যন্ত্রে তৈরি করেন ওই চিরুনি। ছেলে জামশেদ হোটেল ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া। সভা শেষ হতেই রফিক হাঁটা দিলেন ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডের দিকে। তত ক্ষণে আড়াইশোর মধ্যে দুশো চিরুনি বিক্রি হয়ে গিয়েছে।যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘রুটিরুজির সঙ্গে রাজনীতিকে মেলালে হবে না।’’