দেবব্রত পাল।
অনুশীলনের সময়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হল তরুণ ক্রিকেটারের। মৃতের নাম দেবব্রত পাল (২১)। রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে।
পুলিশ সূত্রের খবর, হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা দেবব্রত মাস খানেক আগে রবীন্দ্র সরোবর লাগোয়া বিবেকানন্দ পার্কের ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ‘ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র তত্ত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণ চলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন কোচিং শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। ওই কোচিং সেন্টারের প্রশিক্ষক মনোজ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তেই ছেলেদের বলা হয়, এখনকার মতো কোচিং বন্ধ থাকবে। সেইমতো আমি ও অন্য ছেলেরা মাঠ লাগোয়া ক্যাম্পে ঢুকে পড়ি। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বীভৎস শব্দ হয়। চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে।’’ মনোজবাবু জানান, এর পরেই মাঠের এক দিক থেকে প্রবল চিৎকার শুনতে পান তাঁরা। ছুটে গিয়ে দেখেন, মাঠের মধ্যে প়ড়ে রয়েছেন দেবব্রত। দেবব্রতের বন্ধু রাহুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমি তখন দেবব্রতের পাশেই ছিলাম। চোখ ঝলসানো আলো ও বিকট আওয়াজে প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। সম্বিত ফিরতেই দেখি, আমার বাঁ পাশে দেবব্রত মাঠের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার পরেই চিৎকার করে সকলকে ডাকি।’’
রাহুল জানান, ওই অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গেই দেব্রবতের বুকে মাসাজ করতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু ততক্ষণে দেবব্রতের শরীর পুরো কালো হয়ে গিয়েছিল। তাঁর নাড়ির গতি বোঝা যাচ্ছিল না। শরীর দিয়ে পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শোকস্তব্ধ: ছেলের মৃত্যুর পর হাসপাতালে দেবব্রত পালের বাবা দীপক পাল। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
শ্রীরামপুরের দীপককুমার পাল ও চন্দনা পালের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দেবব্রত ছোট। তাঁর দিদি লাবণী পাল আলিপুরদুয়ারে ডাক বিভাগের কর্মী। প্রতিরক্ষাবাহিনী থেকে বছর কয়েক আগে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন দীপকবাবু। দেবব্রত এ বছরেই লিলুয়ার একটি কলেজে বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। রেজাল্ট এখনও বেরোয়নি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন বিকেলে হাসপাতালে আসেন দীপকবাবু ও চন্দনাদেবী। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে ছেলের নিথর দেহ দেখেই বারবার জ্ঞান হারান তাঁরা।
এ দিন একই সময়ে গড়িয়াহাটের একডালিয়া পার্কের একটি বাড়ির তিনতলায় বাজ পড়ে আগুন ধরে যায়। এই বা়ড়িটির পাশেই রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। এ দিনের ঘটনার সময়ে সুব্রতবাবু তাঁর বাড়ির সামনেই ক্লাবে বসেছিলেন। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘দুপুর ২টো নাগাদ প্রথমে আমার ক্লাবের কাছাকাছি বাজ পড়ে। বিকট আওয়াজে ক্লাব থেকে বেরিয়ে গিয়েই আমরা দেখি, পাশের একটি বাড়ির তিনতলার এসি মেশিন থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তখনই বুঝতে পারি, বড়সড় বিপদ হয়ছে।’’ এর পরেই বাড়িটির তিনতলায় আগুন লেগে যায়। খবর যায় পুলিশ ও দমকলে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সময়ে ওই বাড়িটির তিনটি তলাতেই বাসিন্দা ছিলেন। তিনতলার মালিক ও তাঁর স্ত্রী মাস কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন। তিনতলায় অন্য বাসিন্দারা ঘটনার সময়ে বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, তিনতলা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে আশপাশের লোকেদের চিৎকারে বা়ড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই। তবে বজ্রাঘাতে বাড়িটির তিনতলার বড় অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।