প্যান্ডেলে উপচে পড়ছে ভিড়। ছবি: পিটিআই।
পঞ্জিকা মতে ষষ্ঠী হলেও, ভিড়ের ঠেলা দেখলে মনে হবে এ যেন অষ্টমীর রাত! যে দিকে চোখ যায় শুধু কালো মাথা থিক থিক করছে। ঝলমলে আলোর মাঝে মণ্ডপমুখী জনস্রোত। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সল্টলেক থেকে হাওড়া, অন্যান্য জেলা— সর্বত্রই উৎসবের আমেজ।
বৃষ্টির ভ্রুকুটি ছিলই। বরুণদেব সহায় থাকায় দর্শকদের ছাতা বা রেনকোর্ট নিয়ে বেরোতে হয়নি। আট থেকে আশি উৎসবের আমেজে মেতে রয়েছেন সবাই। পঞ্চমীর রাতের ভিড় দেখে অবশ্য বোঝা গিয়েছিল ষষ্ঠীতে রেকর্ড গড়বে কলকাতা। তবে রাতের জন্য অপেক্ষা না করেই দুপুর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় বাড়তে শুরু করে।
উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্য কলকাতার প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেই উদ্বোধন আগেই হয়ে গিয়েছে। শহরে মোট ২ হাজার ৬০০টির মতো বারোয়ারি পুজো হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তার মধ্যে বড় পুজোর সংখ্যা ১৭৯, যেগুলিতে ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। তার মধ্যে রয়েছে উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। উত্তর কলকাতার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সোনার দুর্গা। ৫০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা। ১৩ ফুটের প্রতিমা বানাতে খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। ষষ্ঠীর সকাল থেকেই প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন মণ্ডপে। মায়াপুরের একটি নির্মীয়মান মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন: ষষ্ঠী থেকেই পুজোয় মাতলেন কাজল, জমালেন আড্ডাও
উত্তর কলকাতার আর একটি বড় পুজো কাশী বোস লেন। এখানে থিমের মাধ্যমে পানীয় জল নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে নলিন সরকার স্ট্রিট, মহম্মদ আলি পার্কেও প্রচুর মানুষের ভিড় সকাল থেকে।
থিমের দৌড়ে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কলকাতাও। ত্রিধারা সম্মিলনী, মুদিয়ালী ক্লাব, উদয়ন সঙ্ঘ, তারপর বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী থিমের দৌড়ে উত্তর কলকাতাকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিচ্ছে এরাও। এছাড়া দমদম পার্ক সর্বজনীন, কুমোরটুলি পার্ক, বাগবাজার সর্বজনীনের সাবেকি পুজোও প্রতিবারই দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।
পুজোর ভিড় সামলাতে এবং শহরের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বুধবার, চতুর্থী থেকেই রাস্তায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন শহর জুড়ে থাকছে প্রায় ১৮ হাজারের মতো পুলিশকর্মী। এর সঙ্গে থাকছে ৬০০ থেকে ৭০০ মহিলা পুলিশও। মোতায়েন থাকছে দমকলের ১২টি পাইলট কার, অ্যাম্বুল্যান্স। রাতের দিকে শহরের ছোট মণ্ডপগুলিতে টহল দেবে পুলিশের বিশেষ বাহিনী।
আরও পড়ুন: ঋতাভরী চক্রবর্তীর বেছে দেওয়া উত্তর কলকাতার কিছু পুজো
আলিপুর হাওয়া অফিসও স্বস্তির বার্তা, পুজোর মধ্যে ভারী এবং টানা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি হলে মাঝারি পরিমাণ এবং বিক্ষিপ্ত হতে পারে। ফলে অষ্টমী বা নবমীর জন্যে উপেক্ষা না করেই থিমের মণ্ডপ থেকে শুরু করে সাবেকি প্রতিমা দর্শনে নেমে পড়েছেন শহরবাসী। পাল্লা দিয়ে বিদেশি এবং ভিন রাজ্যের অতিথিদেরও ভিড় এই আলোর উৎসবে।