একজোট: পুজোর নির্মীয়মাণ মণ্ডপের সামনে ‘পিস কমিটি’-র সদস্যেরা। রবিবার, নাদিয়ালে। নিজস্ব চিত্র।
অতিমারি আবহে কোভিড সচেতনতায় জোর দিয়েই বন্দর এলাকায় সেজে উঠছে ২০টি বারোয়ারি পুজো মণ্ডপ। আর পরিবেশ ও কোভিড-বিধিকে মান্যতা দিয়ে তার মধ্যে থেকেই এ বার সেরা তিনটি পুজোকে বেছে নেবেন মেটিয়াবুরুজের মুসলিম ওস্তাগরেরা।
এমনিতে বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজে মুসলিমরাই সংখ্যাগুরু। তবে কলকাতা পুরসভার ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডে সাতটি এবং ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩টি বারোয়ারি দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় রায় বলছিলেন, ‘‘এই এলাকায় হিন্দু-মুসলিম একে অপরের উৎসবে পিঠোপিঠি করে থাকাটাই বাঁচার রসদ জোগায়। এলাকার মুসলিমদের পুজোয় সক্রিয় যোগদান বা ইদে হিন্দুদের পাশে থাকার সম্প্রীতির কোলাজ অতুলনীয়।’’
মুসলিমদের ইদ-ইদুজ্জোহা উৎসব পালনে যেমন এলাকার বীরবল গিরি-অরুণ রায়-রুদ্রেন্দু পালেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকেন, তেমনই পুজোয় চাঁদা তোলা থেকে বিসর্জন— সবেতেই অংশ নেন মহম্মদ ওয়ারিশ, মহম্মদ ফৈয়াজ, জুম্মান শেখরা। এ বার যেমন বাগদিপাড়া রোডে কয়েক দিন ধরেই নাওয়াখাওয়া ভুলে মণ্ডপ তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন মহম্মদ আজাদ, দানিশ শেখ, শেখ ওবাইদুর রহমানেরা। এলাকার শান্তি রক্ষার্থে গঠিত ‘পিস কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক রুদ্রেন্দু পাল বলেন, ‘‘এখানকার পুজোর বড় বৈশিষ্ট্য হল এলাকার মুসলিমদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। পুজোর চাঁদার একটা বড় অংশ আসে ওঁদের থেকেই, তেমনই বিসর্জনেও ভরসা ওঁরাই।’’
কোভিড আবহে বন্দর এলাকার মানুষদের মাস্ক পরতে অনীহা আছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছে। তাই এ বার মণ্ডপগুলিতে কোভিড সচেতনতার উপরেই জোর দিতে চায় নাদিয়ালের বিভিন্ন পুজো কমিটি। ওই সব মণ্ডপে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য মুসলিম দর্জিরা আগেভাগে বানিয়ে রেখেছেন মাস্ক। তাঁরাই আবার বেছে নেবেন সেরা পুজোকেও।
পিস কমিটির আরও এক সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশ বলছেন, ‘‘বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের সামনে ক্যাম্প থাকবে। ভিড় না করতে এবং কোভিড-বিধি মেনে চলতে মাইকে ঘোষণা করা হবে। সবাই যাতে মাস্ক ব্যবহার করেন, তার জন্য আবেদন জানানো হবে। মাস্কহীন দর্শনার্থীকে দেওয়া হবে মাস্কও।’’
ইদ, ইদুজ্জোহা বা মহরমে নাদিয়াল এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পিস কমিটির হিন্দু সদস্যদের পাড়ায় পাড়ায় টহলদারির ছবি গত দু’বছরে চোখে পড়েছে। একই ভাবে বিসর্জনের দিন এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক থাকবেন পিস কমিটির মুসলিম সদস্যেরা।
তবে শুধু পুজোর আয়োজনই নয়। হাওড়া, হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায়
পুজোর জৌলুস কমিয়ে সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কথাও ভাবছেন এই এলাকার পিস কমিটির সদস্যেরা। রুদ্রেন্দু-বীরবলদের কথায়, ‘‘লকডাউন, করোনায় বিপন্ন সকলেই। তার উপরে বার বার বন্যায় কাবু হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, হুগলির আরামবাগ, মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ। আমরা পুজোর আগেই ওই সমস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে যাব।’’