দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বাইক। নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে এক জনের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। সেই শ্রাদ্ধের সামগ্রী কিনতে শিয়ালদহ গিয়ে সেখান থেকে ফেরার সময়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল বছর কুড়ির দুই যুবকের। বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে এন্টালি থানা এলাকার সিআইটি রোডে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাসটিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এর পরে রাতেই উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জ এলাকা থেকে চালক-সহ বাসটিকে আটক করেন ফেটাল স্কোয়াডের তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানায়, মৃতদের এক জনের নাম মণীশকুমার ঝা। অন্য জন রোহন ঝা। মণীশ চারুচন্দ্র কলেজের ছাত্র, রোহন পড়তেন আশুতোষ কলেজে। এন্টালি থানার পুলিশ আধিকারিক আশিস মহন্ত জানান, সকাল ৮টা নাগাদ সিআইটি রোডে একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনার খবর যায় থানায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন, মাটিতে পড়ে থাকা একটি মোটরবাইকের সামনের অংশ তুবড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে গিয়েছে। রাস্তায় পড়ে ছটফট করছেন হেলমেট পরা এক যুবক। আশপাশ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। পাশেই পড়ে থাকা আর এক যুবকের মাথাতেও হেলমেট রয়েছে। তবে তাঁর কোনও হুঁশ নেই। এর পরে পুলিশের গাড়িতে তুলে তিনিই ওই যুবকদের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোহনের মৃত্যু ঘটনাস্থলেই হয়েছে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। কিছু ক্ষণের মধ্যে মৃত ঘোষণা করা হয় বাইকের চালক মণীশকেও।
ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে এর পরে মোটরবাইকের নম্বর ধরে মৃতদের বাড়ির ঠিকানা বার করা হয়। দু’জনেই কসবার টেগোর পার্ক নস্করহাট এলাকার একই বাড়িতে থাকতেন। তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় গিয়ে জানা যায়, মণীশের মামিমার শ্রাদ্ধ ছিল এ দিন। সেই অনুষ্ঠানের সামগ্রী কিনতেই দুই বন্ধু মিলে শিয়ালদহে গিয়েছিলেন। ওই পরিবারকে শ্রাদ্ধের মধ্যে ফের দু’টি মৃত্যুর খবর বলার ভাষা ছিল না আমাদের।’’
আরও পড়ুন: বাবার পচাগলা দেহ আগলে মেয়ে
দুর্ঘটনাস্থলের কাছে রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায়, মৌলালি মোড় থেকে সিআইটি রোডে ঢুকে ২৪০ নম্বর রুটের একটি বাসকে ডান দিক দিয়ে ওভারটেক করতে যান মণীশ। সেই সময়ে বাসের সঙ্গে মোটরবাইকের হ্যান্ডেলের ধাক্কা লাগে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মণীশেরা বাইক-সহ বাসের চাকার নীচে ঢুকে যান। এর পরে বাসটি না থেমেই ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্রে ধরেই উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জ এলাকা গিয়ে বাস ও চালককে আটক করে।
মণীশের পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কথা বলতে চাননি। তাঁর এক আত্মীয় শুধু বলেন, ‘‘একটি শ্রাদ্ধের মধ্যে আরও দু’টি মৃত্যুর খবর। আমরা কেউ কথা বলার অবস্থায় নেই।’’