ফাইল চিত্র।
কখনও ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়ে গ্রাহককে ফোন করে তথ্য সংগ্রহ, কখনও আবার ভুয়ো নথি জোগাড় করে সিম কার্ড তুলে গ্রাহকের ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো। শহরে বসে দিনের পর দিন চলছিল এই কারবার। কিছু দিন ধরেই এমন একাধিক অভিযোগ আসছিল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। তারই ভিত্তিতে বুধবার রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১৬ জনকে গ্রেফতার করলেন গোয়েন্দারা। লালবাজার সূত্রের খবর, ধৃতদের থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ১৮৮টি ডেবিট কার্ড, ৭৮টি মোবাইল এবং ছ’টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই চক্রটির সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ থাকতে পারে।
জানা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে দিনের পর দিন প্রতারণার এই কারবার চালাচ্ছিল অভিযুক্তেরা। রীতিমতো ঘর ভাড়া নিয়ে তারা এই কর্মকাণ্ড ফেঁদে বসেছিল। বুধবার রাতে কলকাতার কসবা, গড়িয়া, সাপুরজি, কেষ্টপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় রাতভর অভিযান চালান লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, গিরিডি ও জামতাড়া এলাকায়। জানা গিয়েছে, মূলত গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ফোন নম্বর জোগাড় করার পাশাপাশি এটিএমে কারসাজি করে টাকা তোলাই ছিল চক্রটির মূল লক্ষ্য।
গোয়েন্দারা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, ধৃতেরা ইতিমধ্যেই একাধিক জনের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েছে। শুধু এই রাজ্যই নয়, প্রতারকদের লক্ষ্য ছিলেন ভিন্ রাজ্যের গ্রাহকেরাও। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কলকাতার আশপাশে কিছু এলাকায় গতিবিধি বাড়তে থাকে চক্রের সদস্যদের। ফোন করে গ্রাহকের থেকে তথ্য হাতানো, এটিএম থেকে টাকা লুটের পাশাপাশি চলছিল চোরাই জিনিস পাচারের কারবার। মূলত রাজারহাট ও কেষ্টপুর এলাকাতেই অভিযুক্তেরা চোরাই মাল পাচারের কারবার চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইলগুলি চোরাই কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, এই চক্রের জাল বহু দূর বিস্তৃত। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চক্রের বাকিদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দাকর্তারা। ধৃত ১৬ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।