প্রতীকী ছবি।
পকসো আইনে রুজু হওয়া শিশু নির্যাতনের একটি মামলায় মূল অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে গেলে এক আইনজীবীর নেতৃত্বে থানার ওসিকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি। মঙ্গলবার সেই মামলায় অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণা করল হাওড়া আদালত। এ দিন প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সর্বাণী মল্লিক চট্টোপাধ্যায় ১৪ জন অভিযুক্তের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত, উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবী মুন্সি মতিয়ার রহমান, মুন্সি আসপিয়ার, লিয়াকত মুন্সি ও মনিরুল মুন্সিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরও ২ বছর জেলে থাকতে হবে তাদের। এ ছাড়া বাকিদের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ হয়েছে।
হাওড়া আদালত সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি হাওড়ার শ্যামপুর থানার ওসি সুমন দাসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গড়চুমুক গ্রামে শিশু নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত লিয়াকত ও মনিরুলকে গ্রেফতার করতে যায়। আদালতের পরোয়ানা নিয়েই রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ওই অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে থানায় আনার পথে আইনজীবী মুন্সি মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে পুলিশকে ঘিরে ফেলেন গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা। অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে পুলিশের উপরে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। পুলিশ প্রথমে পিছু হটলেও সুমনবাবু দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্য জানিয়ে দেন মারমুখী জনতাকে। কিন্তু তারা শান্ত তো হয়ইনি, উল্টে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় দুই অভিযুক্তকে।
এতেই শেষ নয়। সুমনবাবুকে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। গোলমালে গুরুতর জখম হন পুলিশের ওই দলে থাকা এসআই তরুণ পুরকাইত, প্রসেনজিৎ মাঝি-সহ অন্য পুলিশকর্মীরাও।
থানার ওসি আক্রান্ত হয়েছেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় রেজওয়ান মুন্সি নামে এক দুষ্কৃতীকে। গুরুতর আহত
অবস্থায় ওসি সুমনবাবু এবং অন্য পুলিশ আধিকারিকদের উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সুমনবাবুকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মৌলালির একটি বেসরকারি স্নায়ু হাসপাতালে। বেধড়ক মারে ওসির শরীরের ডান দিক কার্যত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ সাত মাস চিকিৎসার পরে সুস্থ হন সুমনবাবু। বর্তমানে তিনি সিআইডিতে কর্মরত।
গড়চুমুকের সিআই রাজা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। তাতে উঠে আসে, উলুবেড়িয়া আদালতের দুই আইনজীবী মতিয়ার ও তার ভাই আসপিয়ার রহমানের
নেতৃত্বেই পুলিশের উপরে হামলা হয়েছিল। এর পরেই ওই দু’জন-সহ মোট ১৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেল হেফাজত হয়। এই মামলায় মোট ১৫ জন সাক্ষ্য দেন। সরকার পক্ষের হয়ে মামলাটি পরিচালনা করেন হাওড়া আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।