বদলে নোট দেবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

‘দশের’ বোঝা বইতে নাকাল পরিবহণ নিগম

পাঁচশো, হাজারের বাতিল নোটের তাড়া নয়। নতুন দু’হাজারি নোটও নয়। নিছকই পয়সা। মুঠো মুঠো হিরে বা গোছা গোছা মোহরের মতো যা এখন জমে জমে পাহাড়।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩১
Share:

পাঁচশো, হাজারের বাতিল নোটের তাড়া নয়। নতুন দু’হাজারি নোটও নয়। নিছকই পয়সা। মুঠো মুঠো হিরে বা গোছা গোছা মোহরের মতো যা এখন জমে জমে পাহাড়।

Advertisement

সরকারি বাস ডিপোর সেকেলে অফিস ঘরে এই পাহাড় দিন-দিন উঁচু হচ্ছে। বিশেষত, প্রধানমন্ত্রীর নয়া নোট-নীতি ঘোষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পাহাড়ের স্বাস্থ্য আরও খোলতাই হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের কর্তারা না পারছেন ফেলতে, না পারছেন গিলতে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ থেকে আমনাগরিক— কেউই এই পয়সার দায়িত্ব নিতে রাজি নন। খাতায়-কলমে অচল নয়। তবু অচল না হয়েও তার গায়ে ‘অচল পয়সা’র তকমাই সেঁটে গিয়েছে।

নোট-বিপর্যস্ত দেশের এই ‘পোড়া কপাল পয়সা’র গল্পের নায়ক ১০ টাকার মুদ্রা। বাসে কন্ডাক্টরের থেকে এই কয়েন খুচরো হিসেবে ফেরত নিতে যাত্রীদের আপত্তি ইদানীং যেন তুঙ্গে উঠেছে। ৫০০, ১০০০-এর নোট বাতিলের পরে ১০ টাকার কয়েনও অচিরেই বাতিল হবে বলে গুজবটা এখনও জাঁকিয়ে রয়েছে। জনৈক পরিবহণ কর্তা বলছেন, ‘‘আগে যেখানে এক জন কন্ডাক্টর রোজ শ’দেড়েক ১০ টাকার কয়েন জমা দিতেন, এখন তা তিনশো-চারশো ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’’

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য বার বার বলা হচ্ছে, ২০০৭ ও ২০১১ সালে দু’দফায় তৈরি ১০ টাকার মুদ্রাই বৈধ। কিন্তু, তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। উল্টে দেখা যাচ্ছে, যাত্রীরা ১০ টাকার কয়েন নিতে রাজি না হলেও তাঁরাই বাসে সেগুলি চালাতে মরিয়া। পরিবহণ নিগম সরকারি সংস্থা। অন্য কেউ নিতে রাজি না হলেও তাঁদের পক্ষে এই কয়েন গ্রহণ করা ছাড়া গতি নেই। পরিবহণ কর্তারা পয়সার পাহাড় মেপে দেখেছেন, এ তো লক্ষ লক্ষ টাকা। তার কী গতি হবে, তা কারও জানা নেই।

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সব থেকে বেশি দশের মুদ্রা রয়েছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (সিএসটিসি) জিম্মায়। সেই সংখ্যা সওয়া দু’লক্ষেরও বেশি। কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগমেরও (ডব্লিউবিএসটিসি) ভাঁড়ার উপচে পড়ছে। ওই দুই নিগম মিলিয়ে ১০ টাকার কয়েন মোট ২৫ হাজারেরও বেশি। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই দশের বোঝা প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার সমান।

কন্ডাক্টরের ফিরিয়ে দেওয়া ১০ টাকার কয়েন নিয়ে অগত্যা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবহণ কর্তারা। এ বার তাঁরাও ফিরিয়ে দিয়েছেন। কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কেন ফেরত নেব? ১০ টাকার কয়েন জাল নয় বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার তো করছি আমরা। কিন্তু কেউ ওই কয়েন বাজারে চালাতে না পারলে তার দায় কখনও নেব না।’’

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, খুচরো চাইতে গেলে উল্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকেই দশের কয়েন ধরানো হচ্ছে। পাঁচ, দুই এবং এক টাকার কয়েনের সঙ্গে তাঁরা দশের কয়েনও কিছু কিছু দিচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কও টাকা বদলানোর সময়ে বেশ কিছু দশের কয়েন ধরিয়েছে। সিএসটিসি-র এক কর্তা বলছেন, ‘‘খালি আমাদের কাছ থেকেই কেউ দশের কয়েন নিচ্ছেন না। এই মুদ্রা-দোষের গেরোয় আমরা তো পাহাড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement