Accident

খেলতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু বাবার, গুরুতর আহত শিশু

পুলিশ সূত্রের খবর, বিশালাক্ষীতলার একটি চারতলা আবাসনের তেতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী উপাসনা, এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সুভাষচন্দ্র পাণ্ডা (৪৪)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫৬
Share:

সুভাষচন্দ্র ও তাঁর শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র

ছাদে গিয়ে শিশুকন্যার সঙ্গে খেলছিলেন বাবা। তখনই কোনও ভাবে হাত ফস্কে বাবার কোল থেকে নীচে পড়ে যায় শিশুটি। সেই সময়ে ঝুঁকে পড়ে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে আর টাল সামলাতে না পেরে নীচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বাবার। শনিবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে পর্ণশ্রী থানার বিশালাক্ষীতলায়। এক বছরের শিশুটি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ওয়ার্ডে ভর্তি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বিশালাক্ষীতলার একটি চারতলা আবাসনের তেতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী উপাসনা, এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সুভাষচন্দ্র পাণ্ডা (৪৪)। আদতে ওড়িশার ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা সুভাষবাবু দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্সে কর্মরত ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে সপরিবার ওই ফ্ল্যাটে ভাড়ায় আসেন। তাঁর ১২ বছরের ছেলে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। মেয়ে পালোক্ষীর বয়স এক বছর ৩ মাস। শনিবার সকালে মেয়ের সঙ্গে খেলা করতে তাকে নিয়ে চারতলার ছাদে উঠেছিলেন সুভাষবাবু। মেয়েকে কোলে নিয়েই খেলছিলেন। পুলিশের অনুমান, ছাদের পাঁচিলের ধারে দাঁড়িয়ে থাকায় কোনও ভাবে পালোক্ষী সুভাষবাবুর হাত ফস্কে নীচে পড়ে যায়। সে সময়ে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে সুভাষবাবুও নীচের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে সোজা নীচে পড়ে যান তিনি। আবাসনের ঘেরা পাঁচিলে তাঁর মাথা ঠুকে যায়।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ভারী কিছু একটা নীচে পড়ার আওয়াজ শুনে লোকজন বাইরে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আবাসনের সরু গলিতে পড়ে রয়েছেন সুভাষবাবু। অথচ শিশুকন্যাটি কোথাও নেই। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীরা সুভাষবাবুকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।

Advertisement


আরও খবর: কুয়াশা এড়াতে গাড়ির আলোই ভরসা পুলিশের

ছাদের এই জায়গা থেকেই পড়ে যান সুভাষচন্দ্র ও তাঁর শিশুকন্যা শনিবার, পর্ণশ্রীতে। নিজস্ব চিত্র​


আরও খবর: মেট্রোর নয়া স্টেশনের বোর্ডে হিন্দির প্রাধান্যের অভিযোগ

এ দিকে তত ক্ষণে পালোক্ষীর খোঁজে ছাদ এবং আবাসনের সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা। কিন্তু কিছুতেই তার খোঁজ মিলছিল না। পরে প্রতিবেশী এক মহিলার নজরে পড়ে যে, পাশের একটি বাড়ির গাছের উপরে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে রয়েছে শিশুটি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে এবং তার মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেশীরা প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানকার ট্রমা কেয়ার ওয়ার্ডের ‘রেড জ়োন’-এ চিকিৎসাধীন পালোক্ষীর মাথায় আঘাত রয়েছে। অবস্থা সঙ্কটজনক। স্নায়ু ও শিশু শল্য চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা করছেন। অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।

বিপর্যয়: ছাদ থেকে পড়েও এই গাছে আটকে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছে এক শিশুকন্যা। তবে নীচের পাঁচিলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তার বাবার। শনিবার, পর্ণশ্রীতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

স্থানীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সুভাষবাবুর ওড়িশার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে রওনা দিয়েছেন। এ দিন দুপুরের পরে ওই আবাসনের ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের যে জায়গা থেকে সুভাষবাবু নীচে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই অংশে পাঁচিলের গায়ে নখের আঁচড়ের দাগ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, টাল সামলাতে না পেরে নীচে পড়ে যাচ্ছেন দেখে শেষ মুহূর্তে বাঁচার জন্য সম্ভবত পাঁচিল আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন সুভাষবাবু। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরের বেশির ভাগ অংশ বাইরে ঝুঁকে পড়ায় শেষরক্ষা হয়নি। ওই আবাসনেরই এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, শিশুটি সবে কথা বলতে শিখেছিল। মাঝেমধ্যেই ছাদে এসে মেয়েকে নিয়ে লোফালুফি খেলতেন সুভাষবাবু। তবে অনেকেই এটা করতে তাঁকে বারণ করতেন বলেও জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement