যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন বাতিল। বন্দরের বাইরে পোস্টার।—নিজস্ব চিত্র।
নৌ-সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় খিদিরপুর ডকে এসে নোঙর করেছিল দু’টি যুদ্ধজাহাজ। ঠিক ছিল, সাধারণ মানুষের ঘুরে দেখার জন্য ‘আইএনএস খুকরি’ ও ‘আইএনএস সুমিত্রা’ নামে ওই জাহাজ দু’টি শুক্রবার পর্যন্ত সেখানেই থাকবে। কিন্তু মঙ্গলবার আচমকাই তাদের সমুদ্রে পাঠিয়ে দিল নৌবাহিনী। জাহাজ দু’টিতে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত।
মুখে অবশ্য সে কথা বলেনি নৌবাহিনী। তাদের বক্তব্য, বিশেষ কারণে জাহাজ দু’টিকে ফেরত পাঠানো হল সমুদ্রে। কিন্তু সূত্রের খবর, সোমবার জাহাজ দু’টি এসে নোঙর করার পর রাতেই দিল্লির সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-এর সদর দফতর থেকে একটি গোয়েন্দা-সতর্কবার্তা আসে কলকাতা বন্দরে। তাতে বলা হয়, কলকাতা বন্দরে জলপথে এসে পাক জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে। সেই সতর্কতা পাওয়ার পরেই বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে নৌবাহিনীকে প্রদর্শনী বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের বক্তব্য, প্রদর্শনীতে সাধারণ দর্শকের ভিড়ে মিশে পাক জঙ্গিরা যুদ্ধজাহাজে হামলা চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা ছিল গোয়েন্দাদের। কলকাতার পাশাপাশি হলদিয়া বন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হয়।
সিআইএসএফের গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জলপথ উজিয়ে আসা জঙ্গিদের সম্ভাব্য হামলায় পাক নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েক জন অফিসার কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারেন। অতীতে জম্মু ও কাশ্মীর-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জঙ্গি হামলার বহু ঘটনায় পাক সেনার একাংশের মদতের প্রমাণ মিলেছে। এমনকী ওয়াগা সীমান্তে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণেও পাক সেনার যুক্ত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
বস্তুত, এমন একটা সময়ে এই সতর্কবার্তা এল, যখন বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের সূত্রে হদিস মিলেছে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী চক্রের। যারা পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করে পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ও গ্রেনেড তৈরি করছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। যে মারণাস্ত্রের অনেকগুলি এখনও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কিছু জেলার গোপন ডেরায় মজুত রয়েছে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। প্রদর্শনীর তোড়জোড় শুরু হওয়ার সময়েই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌবাহিনীকে জানিয়েছিলেন তাঁরা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার রীতিনীতি মেনে চলেন। কলকাতা বন্দরের অবস্থান ও খাগড়াগড় কাণ্ডের জেরে উদ্ভূত সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই ডকে নোঙর করা ওই যুদ্ধজাহাজ দু’টি সাধারণ দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া উচিত হবে না। সোমবার সন্ধ্যায় যুদ্ধজাহাজ দু’টি এসে পৌঁছনোর পরেও বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই অবস্থানে অনড় ছিলেন। রাতে আসে সিআইএসএফের সতর্কবার্তা। এ দিকে, মঙ্গলবার সকালেই দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কিছু বাচ্চাকে যুদ্ধজাহাজে ঘোরাতে আনার কথা ছিল। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয়, বাচ্চাদের দলটি ঘুরে যাওয়ার পরেই প্রদর্শনী বাতিল করে দেওয়া হবে।
কলকাতা বন্দরের মেরিন বিভাগের অধিকর্তা ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান অরুণকুমার বাগচী এ দিন বলেন, “জঙ্গি হানার সতর্কবার্তা পেয়ে বন্দরের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” শুধু কলকাতা বন্দরের ভিতরের নয়, বাইরের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে হুগলি নদী সংলগ্ন গোটা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্দরের ভিতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে সিআইএসএফের হাতে। বাইরের দায়িত্বে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, রিভার ট্রাফিক পুলিশকে অতিরিক্ত লঞ্চ ও বাহিনী দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হুগলি নদীর উপরে সেতুগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
জঙ্গি হামলার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে আজ, বুধবার বেলা ১১টায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালো।ঁ হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (মেরিন অপারেশন) এস এন চৌবে এ দিন জানান, সোমবার রাতের নির্দেশ মতো পুলিশ, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও সিআইএসএফ-কে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বন্দরে যে সব জাহাজ চলাচল করছে, তাদের উপরেও নজরদারি রয়েছে।