নারদ নিউজ সংস্থার কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তে কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে আগেই। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েনি কলকাতা পুলিশ। নারদ নিউজের কর্মী রাধাকৃষ্ণণ টিডি-কে আগামিকাল, সোমবার তলব করেছে মুচিপাড়া থানা।
রাধাকৃষ্ণণ ম্যাথুর গাড়িচালক। তদন্তের স্বার্থে দু’টি নথি সমেত তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ওই থানার এসআই রাজীব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তবে ম্যাথুর দাবি, সিবিআই তাঁকে কলকাতা পুলিশের ওই নির্দেশ উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের উপরে ম্যাথুর স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁর বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ করেছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। ম্যাথুর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয় মুচিপাড়া থানায়। কলকাতা পুলিশ এর পর ম্যাথুকে ডেকে পাঠায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিসও জারি করে। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে ওই তদন্ত বন্ধ রাখতে হয় পুলিশকে।
শুক্রবার নারদ ঘুষ কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-কে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আইনজীবীদের একাংশের ব্যাখ্যা, এর ফলে নারদ-কাণ্ড নিয়ে কলকাতা পুলিশের মামলা বা তদন্ত করার অধিকার স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও মুচিপাড়া থানা কোন অধিকারে ম্যাথুর সংস্থার কর্মীকে সোমবার হাজিরা দিতে বলল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ম্যাথুর বক্তব্য, তিনি যাবতীয় নথি নিয়ে যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত। কিন্তু কলকাতা পুলিশ তদন্তের বদলে তাঁকে হেনস্থা করেছে। তাঁকে এবং তাঁর সংস্থাকে ফের হেনস্থার উদ্দেশ্যেই রাধাকৃষ্ণণকে মুচিপাড়া থানায় তলব করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। ম্যাথুর কথায়, ‘‘আমি অন্যায়টা কী করেছি? আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে কলকাতা পুলিশ। আমাদের দফতর থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ আটক করেছে। নারদের অফিস এখন বন্ধ। ডিসেম্বর থেকে আমি বেতনও পাচ্ছি না।’’ ম্যাথুর আরও দাবি, বন্ধুরা ডাকলেও ইদানীং তিনি কলকাতাকে এড়িয়ে চলেন। কারণ, রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁকে শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থা, মাদক পাচারের অভিযোগ দেওয়া হতে পারে। তাঁকে জেলে পাঠানোর সব রকম চেষ্টা চলছে বলে তাঁর আশঙ্কা।
এই প্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে একটি চিঠি দিয়েছেন ম্যাথু। সেখানে তিনি রাধাকৃষ্ণণকে মুচিপাড়া থানায় তলব করার প্রসঙ্গ জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি সিবিআইয়ের সামনে সব নথি এবং সরঞ্জাম পেশ করতে প্রস্তুত। কিন্তু পুলিশের সামনে নয়। কারণ, আমার সন্দেহ, পুলিশ আমাকে বিপদে ফেলার জন্য সেগুলি বিকৃত করতে পারে।’ সেই কারণে সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে নারদ কর্তার অনুরোধ— তিনি যেন শুধু তাঁদের কাছেই যাবতীয় নথি এবং সরঞ্জাম জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন।
বস্তুত, রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিরও অভিযোগ, ম্যাথুর বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের মামলা আদতে রাজনৈতিক। স্টিং অপারেশনের জেরে নবান্নের অঙ্গুলিহেলনেই নারদ কর্তাকে বেগ দিচ্ছে লালবাজার। পুলিশের অবশ্য দাবি, ম্যাথুর গাড়ির চালককে তলব করার সঙ্গে নারদ মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। ওটা তোলাবাজির অভিযোগে রুজু করা পৃথক একটি মামলা।
সিবিআই সূত্রের খবর, ম্যাথু আপাতত কোচিতে। তাঁর বয়ান রেকর্ড করতে সেখানে যেতে পারে তদন্তকারীদের একটি দল।