তিন নির্দল কাউন্সিলর জয়ের পরই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
গণনা কেন্দ্রে জয়ের শংসাপত্র হাতে নিয়েই তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিন নির্দল কাউন্সিলর। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে তাঁদের ভোটের লড়াইকে ভাল চোখে দেখনি দল। আর তাই ওই কাউন্সিলরদের ইচ্ছা থাকলেও তৃণমূল তাঁদের জন্য দলের দরজা খুলতে নারাজ। এ ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বর্ষীয়ান নেতা সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রয়াত নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেতা নির্দল প্রার্থী হিসেবে কলকাতার পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সচিদানন্দ এবং তনিমা পরাজিত হলেও, জয় পান তিন জন।
নির্দল প্রার্থী হিসেবে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে আয়েশা কনিজ, ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে রুবিনা নাজ এবং ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বাশা নস্কর জয়ী হন। এঁরা দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হন। ভোটে জয় পেয়েই তাঁরা দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। কিন্তু, তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখনই তাঁদের দলে নেওয়া যাবে না। তাই জয়ী ওই নির্দল কাউন্সিলরদের বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্র নিবাস দলের বৈঠক ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকেই কলকাতার পরবর্তী মেয়রের নাম ঘোষণা করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাউন্সিলরদের এই বৈঠকে ডাক না পেয়ে নির্বাচিত নির্দল কাউন্সিলররা বুঝে গিয়েছেন, দলে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা অত সহজ নয়। ২০১৫ সালের পুরভোটেও তিন জন নির্দল কাউন্সিলর জয় পেয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী হারিয়েই জয় পেয়েছিলেন তাঁরা। কলকাতা বন্দর বিধানসভার অন্তর্গত ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছিলেন আনোয়ার খান। হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী হেমা রামকে। জয় পাওয়ার দিনেই তাঁকে দলে যোগদান করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। পরে আরও দু’জন নির্দল কাউন্সিলরকেও দলে নিয়েছিল তৃণমূল।
কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি ২০১৫ সালের মতো নয়। দলের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দলের অনুমোদিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ‘দলবিরোধী’ কাজে সামিল বলেই মনে করছে তৃণমূল। ফলে নির্দল জয়ী প্রার্থীদের দলের বাইরেই থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলের যুক্তি, দলের বিরোধিতা করে দাঁড়ানো তিন কাউন্সিলরকে যদি দলে নেওয়া হয়, তা হলে সর্বস্তরের কর্মী মহলে ভুল বার্তা যাবে। আগামী দিনে রাজ্যে শতাধিক পুরসভার নির্বাচন। এক বার নির্দলদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলে, সেই সব পুরভোটে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ‘বিদ্রোহ’ সামাল দিতে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হবে তৃণমূল নেতৃত্বকে। তাই আগে থেকেই কড়া হাতে এই ধরনের উদ্যোগ বন্ধ করতে চায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।