সাদা ও নীলের গেরোয় নড়লই না বাস

‘সৌহার্দ্য’ যাত্রার গোড়াতেই ছন্দপতন! বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে পতাকা নেড়ে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চাকাই নড়ল না গাড়ির। বাধ্য হয়ে কলকাতার সাধারণ রুটে চলা ভূতল পরিবহণ নিগমের একটি বাসে যাত্রীদের চাপিয়ে ওই আন্তর্জাতিক যাত্রার সূচনা করল রাজ্য সরকার। এ রকম একটি অনুষ্ঠানে এ ধরনের বিপত্তি ঘটায় মুখ্যমন্ত্রীকে দৃশ্যতই বিরক্ত দেখায়। অস্বস্তিতে পড়ে যান পরিবহণকর্তারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

‘সৌহার্দ্য’ যাত্রার গোড়াতেই ছন্দপতন!

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে পতাকা নেড়ে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চাকাই নড়ল না গাড়ির। বাধ্য হয়ে কলকাতার সাধারণ রুটে চলা ভূতল পরিবহণ নিগমের একটি বাসে যাত্রীদের চাপিয়ে ওই আন্তর্জাতিক যাত্রার সূচনা করল রাজ্য সরকার। এ রকম একটি অনুষ্ঠানে এ ধরনের বিপত্তি ঘটায় মুখ্যমন্ত্রীকে দৃশ্যতই বিরক্ত দেখায়। অস্বস্তিতে পড়ে যান পরিবহণকর্তারাও।

কেন এই বিভ্রাট? বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বলছেন, বাসের আলোকসজ্জাই এই বিপত্তির কারণ। ভলভো সংস্থার নির্দেশিকা এড়িয়ে গাড়ির সারা গায়ে এলইডি আলো লাগিয়ে বাসটিকে অতিরিক্ত আকর্ষণীয় করে তুলতে গিয়েই বিদ্যুৎ বিভ্রাট ডেকে আনা হয়েছে। কী ভাবে? সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, যে ভলভো বাসটিকে প্রথম কলকাতা-ঢাকা যাত্রার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল পরিবহণ দফতর, সেটির রং হলুদ-মেরুন ছিল। দু’দিন আগে সেটিকে নীল-সাদা করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও চোখধাঁধানো জেল্লা আসছিল না বলে নবান্নের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে বাসের মাথায় লাল-নীল ফ্ল্যাশার লাগায় পরিবহণ দফতর।

Advertisement

এখানেই শেষ নয়। বাসের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানাচ্ছেন, ফ্ল্যাশার ছাড়াও গোটা বাসটাকে এলইডি আলোয় সাজিয়ে তোলার প্রস্তাব দেয় পরিবহণ দফতর। সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাতে রাজি না হওয়ায় অন্য একটি সংস্থাকে দিয়ে তড়িঘড়ি ওই কাজ করানো হয়। আর সেখানেই বিভ্রাটের জন্ম বলে মনে করছেন ওই কর্মীরা। এ দিন প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ভলভো সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা বুঝতে পারেন, ওই এলইডি আলোর জন্য আলাদা একটি সর্কিট করা হয়েছিল এবং তা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাসের মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের সঙ্গে। সেই কারণেই এ দিন যত বার বাস স্টার্ট দেওয়া হচ্ছিল, ফিউজ উড়ে যাচ্ছিল। ওই ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ বলেন, ‘‘যে প্রযুক্তিতে এই হাই প্রোফাইল বাস তৈরি হয়, তা এতই স্পর্শকাতর যে মূল পরিকাঠামোর বাইরে কিছুই লাগানো যায় না। কিন্তু তা এক রকম অস্বীকার করেই এলইডি-র তার বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল লাইনে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

কেন এই অতিরিক্ত সাজসজ্জা? জবাব এড়িয়ে ওই বাসের আরোহী এবং রাজ্য সরকারের আবাসন ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘যান্ত্রিক ত্রুটি একটা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। ঠিক সময়ে বাস ঢাকায় পৌঁছে যাবে।’’ আর পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কেন যান্ত্রিক ত্রুটি হল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর জন্য কেউ দায়ী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আলাপনবাবুও ওই বাসে ঢাকা যাচ্ছেন। বাসযাত্রীরা জানিয়েছেন, সাধারণ রুটের বাসে চাপিয়ে নবান্নে থেকে প্রথমে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের কাছে একটি ধাবায়। সেখানে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেন বাসযাত্রীরা। এর মধ্যেই ঢাকা থেকে কলকাতামুখী একটি বাসকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই ধাবায়। পাশাপাশি অন্য একটি বাতানুকূল বাসও পৌঁছে যায় ধাবায়। সেখানেই কলকাতামুখী ঢাকার বাসের যাত্রীদের ওই বাতানুকূল বাসে চাপিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় করুণাময়ী বাস টার্মিনাসে। আর ‘সৌহার্দ্য’ যাত্রীদের তুলে দেওয়া হয় ঢাকার বাসে। রাত ১০টা নাগাদ ওই বাস পৌঁছয় পেট্রাপোল সীমান্তে।

সীমান্ত পেরিয়ে বেনাপোলে বাস যেতেই তাঁদের স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসে হাজার দু’য়েক মানুষ। মুখে ‘জয় বাংলা’, ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী জিন্দাবাদ’ স্লোগান। নেতৃত্বে বেনাপোলের মেয়র ও এলাকার এমপি।

রাতের খবর, বাসের প্রযুক্তিগত সমস্যা অনেকটাই সারানো গিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরে বাস সারাতে নেমে পড়েন ইঞ্জিনিয়ারেরা। সন্ধে সওয়া ৭টা নাগাদ তাঁরা বাসটিকে কোনও রকমে চালু করে নিয়ে যান ভলভোর সার্ভিস সেন্টারে। পরিবহণকর্তারা আশা করছেন, আজ, শুক্রবার সেটি ঢাকায় পৌঁছে যাবে। শনিবার সেখানেই ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা যৌথ ভাবে পতাকা নেড়ে ওই বাসটিকে আগরতলার উদ্দেশে রওনা করবেন। সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সেই বাসযাত্রারই সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে দুপুর তিনটে নাগাদ নবান্নে চলে আসে ফুলের মালা, বেলুন ও রঙিন ফিতে দিয়ে সুন্দর করে সাজানোগোছানো নীল-সাদা রঙের ভলভো বাসটি। এই উদ্বোধন উপলক্ষে সাজসাজ রব ছিল সকাল থেকেই। আয়োজনেও কোনও খামতি ছিল না। নবান্নের দাওয়ায় গান-বাজনার আসর বসেছিল। ফুল-মালায় সাজানো হয়েছিল মঞ্চ। দেওয়ালের ঝোলানো ছিল কলকাতা-ঢাকা ‘সৌহার্দ্য’ যাত্রার রঙিন পথ-ছবি। কিন্তু সেই তাল কেটে যায় আচমকাই, যখন দেখা যায় বাসের ইঞ্জিন স্টার্ট নিচ্ছে না। সরকারি সূত্রের খবর, বাস নবান্নে পৌঁছনোর পরেপরেই এই বিপত্তি নজরে আসে বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের। তবে কিছু ক্ষণের চেষ্টায় ফের বাস চালু হয়ে গেলে পুলিশকর্তারা পরামর্শ দেন, অনুষ্ঠানে যাতে কোনও ভাবে ছেদ না পড়ে তার জন্য উদ্বোধন পর্যন্ত বাসের ইঞ্জিন চালু থাকুক। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তা-ও সম্ভব হয়নি।

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে পড়েন বাস চালুর জন্য। অফিসারেরা তাঁকে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানালে বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটবে না বুঝতে পেরে তিনি বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার জকি আহাদকে পাশে নিয়ে পতাকা নেড়ে বাসযাত্রার উদ্বোধন করেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দিনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
এই বাস পরিষেবা ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে জলপথে যোগাযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’ এ ছাড়া, সড়কপথে মালদহ থেকে রাজশাহী পৌঁছনোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement