এক বাসেই কলকাতা থেকে ঢাকা ছুঁয়ে আগরতলা

এত দিন যেতে হতো ‘ব্রেক জার্নি’ করে। কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আগরতলা বাস রুট চালু ছিল আলাদা-আলাদা ভাবে। এ বার তা-ই জুড়ে গিয়ে হতে চলেছে সরাসরি একটিই রুট। কলকাতার সল্টলেক থেকে ঢাকা ছুঁয়ে বাস পৌঁছতে চলেছে আগরতলায়। সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা ও ত্রিপুরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এই সংক্রান্ত সমঝোতাপত্রটি স্বাক্ষর হতে চলেছে আগামী মাসের গোড়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:৫৩
Share:

এত দিন যেতে হতো ‘ব্রেক জার্নি’ করে। কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আগরতলা বাস রুট চালু ছিল আলাদা-আলাদা ভাবে। এ বার তা-ই জুড়ে গিয়ে হতে চলেছে সরাসরি একটিই রুট। কলকাতার সল্টলেক থেকে ঢাকা ছুঁয়ে বাস পৌঁছতে চলেছে আগরতলায়। সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা ও ত্রিপুরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এই সংক্রান্ত সমঝোতাপত্রটি স্বাক্ষর হতে চলেছে আগামী মাসের গোড়ায়। সেই সময়েই বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। নবান্ন সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে আগামী ৬ জুন সল্টলেকের আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাস থেকে একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার প্রথম বাস ছাড়বে আগরতলার উদ্দেশে।

Advertisement

সড়কপথে বাস বদল করে যাওয়া ছাড়াও পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই বাংলাভাষী রাজ্যের মধ্যে এখন যাতায়াত করা যায় আকাশপথে ও রেলপথে। কিন্তু প্রথমটি ব্যয়বহুল, আর দ্বিতীয় পথে আগরতলা যেতে দু’দিনের বেশি সময় লেগে যায়। পরিবহণ কর্তারা বলছেন, কলকাতা থেকে সরাসরি বাস চালু হলে ১৪-১৫ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যাবে আগরতলায়। আপাতত ঠিক আছে, সপ্তাহে তিন দিন কলকাতা থেকে এই বাস ছাড়বে। আর আগরতলা থেকে বাসটি ছাড়বে অন্য তিন দিন। ভাড়া লাগবে ২০০০ টাকারও কম।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্ভাব্য ঢাকা সফরে মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যে সব চুক্তি ও সমঝোতাপত্র সই হওয়ার কথা, তার মধ্যে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস পরিষেবার বিষয়টি ছাড়াও রয়েছে চট্টগ্রামের রামগড় থেকে ত্রিপুরার সাব্রুম পর্যন্ত ফেনি ব্রিজ, গুয়াহাটি-শিলং-ঢাকা বাস পরিষেবা, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটর ভেহিকেলস চুক্তি। দিল্লি চায়, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই কলকাতা-আগরতলা সরাসরি বাসের চাকা ঢাকার মাটি ছুঁক। সেই কারণেই ৬ জুন তারিখটিকে মাথায় রেখে এগোচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। শুধু তা-ই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মানুষ যাতে ওই ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারেন, সেই জন্য বিভিন্ন জায়গায় ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ লাগানোরও পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও সড়ক মন্ত্রক।

Advertisement

এই কর্মসূচি আরও রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে, যে হেতু প্রধানমন্ত্রী নিজে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ মাসের গোড়ায় কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকায় তাঁর সফরসঙ্গী হওয়ার অনুরোধ করেন মোদী। নবান্ন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, মোদীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে মমতা বাংলাদেশে যাবেন। সে ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে আগরতলাগামী প্রথম বাসটি ঢাকায় পৌঁছনোর সময়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেখানে হাজির থাকতে পারেন মমতাও। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোনও কারণে মমতার সফর বাতিল হয়ে গেলে কলকাতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি। আর আগরতলায় বাস পৌঁছলে সেখানে থাকতে পারেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পরিবহণমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের। চলছে খসড়া চুক্তি তৈরির কাজও। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, পুরোদস্তুর পরিষেবা শুরুর আগে এক বার পরীক্ষামূলক ভাবে কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে বাস ছুটবে আগরতলা। তারও আগে, ২২ মে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হবে গুয়াহাটি-শিলং-ঢাকা বাস চলাচল। ওবায়েদুল কাদের জানান, এই বাসের আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করাবেন মোদী।

গত বছর কাঠমান্ডুর সার্ক সম্মেলনে স্থির হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে মসৃণ পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে ‘মোটর ভেহিকলস চুক্তি’ করা হবে। কিন্তু পাকিস্তান বাদ সাধায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার কার্যত পাকিস্তানকে বাইরে রেখেই ওই চুক্তি সারতে চাইছে সার্ক-ভুক্ত চারটি দেশ। আপাতত স্থির হয়েছে, জুনে থিম্পুতে চার দেশের পরিবহণমন্ত্রী এই চুক্তি চূড়ান্ত করবেন। তৎপরতা চলছে, যাতে মোদীর বাংলাদেশ সফরের আগেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। মোদীর সফরে কথা হতে পারে কলকাতা-চট্টগ্রাম, কলকাতা-খুলনা, কলকাতা-যশোহর ও শিলং-চট্টগ্রাম বাস যোগাযোগ নিয়েও। রাজ্যের পরিবহণকর্তারাও বসে নেই। ১৪ মে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বাস রুট নিয়ে তাঁরা বৈঠক করেন পরিবহণ মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে। রাজ্যের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রসচিবও। সব মিলিয়ে মোদী সরকারের এই কর্মসূচিকে সফল করতে ব্যস্ত মমতার সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement