ছবি: সংগৃহীত।
কারও অভিযোগ, কলকাতা পুরভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতার বাইরের নেতা এবং বিধায়কদের, যাঁদের এই শহরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা কম। কারও অভিযোগ, কলকাতা পুরভোটের দায়িত্বে রয়েছেন এমন নেতারা যাঁরা অন্য কাজে ব্যস্ত। কারও অভিযোগ, গত ১৭ নভেম্বর ওই ভোট পরিচালন কমিটি এবং প্রচার কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখনও পর্যন্ত সাকুল্যে তার বৈঠক হয়েছে একটি। কেউ আবার অন্য কোনও নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে দলে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলছেন।
কলকাতা পুরভোটের যখন আর মাত্র ১৫ দিন বাকি, তখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অন্দরমহল এই রকম পারস্পরিক তির ছোড়াছুড়িতে বিদ্ধ। ফলে ২০১৫ সালে কলকাতা পুরভোটের আগে বিজেপির যে রাজ্য দফতর ভিড়ে গমগম করত, এ বছর কলকাতার ভোটের আগে তা কার্যত ভাঙা হাটের চেহারায়। এর প্রভাব পড়েছে প্রার্থীদের উপরেও। উত্তর কলকাতার একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা দলীয় কর্মীদের প্রচারেই নামাতে পারছেন না। এক জন আবার পরিস্থিতি দেখে লড়াই থেকেই পিছিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। শেষে রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে বুঝিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে রাজি করিয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার ১৩৩ এবং ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী যথাক্রমে সদানন্দ প্রসাদ এবং মমতাজ আলি শনিবার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অবশ্য অভিযোগ, “তৃণমূল আমাদের ওই দুই প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে।” জবাবে তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার কো-অর্ডিনেটর বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখনও পর্যন্ত ১৪৪টি ওয়ার্ডের কোথাও এই রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। কোনও বিরোধী দলের তরফেই থানা বা নির্বাচন কমিশনে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। বিজেপি বরং সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ না করে মানুষের কাছে যাক।” কিন্তু পুরভোটের মুখে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এই রকম ‘গা ছাড়া’ অবস্থার কারণ কী? বিধানসভা ভোটে ২০০ আসন জিতে সরকার গড়বে বলে প্রচার করে ৭৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। ওই ভোটের ফলের পর পাঁচটি বিধানসভার উপনির্বাচন এবং দু’টির বাকি থাকা ভোটেও পর্যুদস্ত হয়েছে তারা। দলের একাংশের মতে, ভোটের ওই ফলে কর্মীদের মনোবলে আঘাত লেগেছে। এই অবস্থা থেকে কর্মীদের লড়াইয়ে নামাতে যে ধরনের পরিকল্পনা দরকার, দলে তার অভাব আছে। বিজেপির কলকাতা পুরভোটের পরিচালন কমিটির দায়িত্বে আছেন দুই সাংসদ অর্জুন সিংহ ও জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং দলের রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একাংশের মতে, অর্জুন ভাইপোর বিয়ে এবং লোকসভার অধিবেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। জ্যোতির্ময়ও ছিলেন লোকসভার অধিবেশনে। আর রাজু এখনও মেয়ের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। দলের ওই অংশের আরও বক্তব্য, ওই তিন নেতার কেউই কলকাতার বাসিন্দা নন। কলকাতা পুরসভার ১৬টি বরো এলাকার প্রতিটির জন্য এক জন করে দলীয় বিধায়ককে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বিজেপি। দলের একাংশের বক্তব্য, ওই বিধায়করাও কলকাতার বাসিন্দা না হওয়ায় এলাকার ভোট বুঝতে অসুবিধায় পড়ছেন।
গত ২৭ নভেম্বর কলকাতার ভোটের প্রচার কমিটির বৈঠক করে বিজেপি। তার পরে এখনও পর্যন্ত আর কোনও বৈঠকে ওই কমিটির সদস্যরা ডাক পাননি। এটাও প্রস্তুতির অভাবের অন্যতম কারণ বলে দলের অনেকে মনে করছেন। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, “দলের একাংশের মত বলে যা বলা হচ্ছে, তা কোনও বিজেপি কর্মীর বক্তব্য হতে পারে না।” তবে বিজেপির এখনকার চেহারা যে ২০১৫-র পুরভোটের সময়কার মতো নেই, তা মেনে নিয়ে শমীক বলেন, “প্রত্যাশার শিখরে থাকা কোনও রাজনৈতিক দল অপ্রত্যাশিত ফলাফলের সম্মুখীন এবং তার পর সীমাহীন সন্ত্রাসের শিকার হলে তার শরীরী ভাষা কিছুটা অচেনা হয়ে যায়। বিজেপি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে ১৪২টি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।”
অর্জুনও সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, “আমার ভাইপোর বিয়ে মিটে গিয়েছে। আমাকে পুরভোটের কাজ করতে হবে বলে লোকসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কাজ থেকে দল ছুটি দিয়েছে। আমি এখন কলকাতাতেই ভোটের কাজ দেখব। আমি দলের মধ্যে কোথাও কোনও উৎসাহের অভাব দেখছি না। সকলেই যাঁর যাঁর কাজ করছেন।”