এই ঘটনাকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে মনোবিদেরা। ফাইল চিত্র।
সম্পত্তির ভাগ নিয়ে মন কষাকষির জেরে ঘুমন্ত ছেলেকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে বাবা শেখ ইউসুফ। গুরুতর জখম হন নিহতের স্ত্রী এবং দুই মেয়েও। গলসি ২ ব্লকের খানো-ডাঙাপাড়ার এই ঘটনাকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে মনোবিদেরা। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের ধারণা, এর নেপথ্যে সম্পত্তিগত বিবাদ ছাড়া, অন্য কারণও থাকতে পারে। ঘটনার ফরেন্সিক তদন্তের প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন।
অভিযোগ, নিহত ইকবালদের ঘরের পিছনের জানলার নীচে টুল রেখে তার উপরে পাঁচ কিলোগ্রামের গ্যাসের সিলিন্ডার বসান ইউসুফ। পাইপ দিয়ে গ্যাস ছেড়ে দেন ওই ঘরে। তার পরে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনার কথা শুনে রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্তের দাবি, ‘‘জীবনভর পুলিশের নানা পদে ছিলাম। হাজারও মামলার মধ্যে বাবার হাতে এই কারণে ছেলে খুন, শুনিনি। এটা তাই বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা। ফরেন্সিক তদন্তের প্রয়োজন আছে।’’ বর্ধমান শহরের বাসিন্দা রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, “বিরলতম ঘটনা।’’ তবে তাঁরও দাবি, ‘‘সম্পত্তি-বিবাদই একমাত্র কারণ কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ এ ভাবে খুনের বিষয়টি অভাবনীয় ঘটনা বলেই মনে করেন আরও এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা অসিত ভট্টাচার্যও। ঘটনায় অভিযুক্তের ‘মনোজগতে’ ঢুঁ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা। তবে তাঁদেরও দাবি, এই ঘটনা ‘বিরলতম’। পাশাপাশি, এই ঘটনা সংঘটনের মধ্যে কোথাও ‘জয়ের আনন্দ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মনোবিদ ইন্দ্রাণী দত্ত। তাঁর কথায়, “বাবা-ছেলের পরস্পরের মধ্যে ক্রোধ তৈরি হয়েছিল। হয়তো সম্পত্তির ভাগ দিতে বাধ্য হচ্ছিলেন বাবা। এই ‘বাধ্য’ হওয়াটাই তাঁর কাছে ‘হেরে যাওয়া’। হারার চেয়ে খুন করে জয়ের আনন্দই শ্রেয়, এই ভাবনা থেকেই হয়তো বাবা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’
পাশাপাশি, এই ঘটনা কোনও দীর্ঘদিনের ‘আক্রোশের’ ফল বলে দাবি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক অমিতাভ দাঁয়ের। তাঁর মতে, ‘‘ছেলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আক্রোশ, ক্ষোভ জমেছিল। মাথার ভিতরে ‘ডিফেন্স মেকানিজ়ম’ কাজ করছিল। হয়তো সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার জন্যই পরিকল্পিত চিন্তা শুরু হয়েছিল।’’