স্মার্টফোনে অ্যাপ ব্যবহার করে শহরতলির ট্রেনের টিকিট কাটার সুবিধা চালু হয়েছে পূর্ব রেলে। গত ৮ জানুয়ারি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ওই অ্যাপ উদ্বোধন করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর রেল বিভাগে কবে এই অ্যাপ চালু হয়, তারই প্রতীক্ষায় যাত্রীরা। কারণ, এই অ্যাপে টিকিট কাটার ঝঞ্ঝাট মিটে যাবে। আর লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি পোহাতে হবে না।
এত দিন দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে একটি সংস্থার মাধ্যমে অনলাইন পরিষেবা চালু করেছিল রেল। পরে অ্যানড্রয়েড ও উইনডোজ মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে এই পরিষেবা পাচ্ছিলেন রেল যাত্রীরা। কিন্তু ওই পরিষেবায় শুধুমাত্র সংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটা যেত। তবে সব অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনে ‘ইটিএস অ্যাপ’ (আন-রিজার্ভড টিকিটিং সার্ভিস) নামে রেলের এই নতুন অ্যাপ ব্যবহার দক্ষিণ-পূর্ব রেলে চালু হলে অসংরক্ষিত টিকিট কাটা যাবে। প্যাসেঞ্জার ট্রেনের টিকিট থেকে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে। এই পরিষেবার চালু হলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর বিভাগের মেদিনীপুর, খড়্গপুর, গিরিময়দান, পাঁশকুড়া, মেচেদার মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে টিকিটের লাইন কমবে বলেই যাত্রীদের আশা। খড়্গপুরের খরিদার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নারায়ণ দাস বলেন, “ব্যবসার কারণে মাঝেমধ্যে হাওড়া যেতে হয়। শহরের দু’টি স্টেশনেই টিকিটের লাইনে ভিড় অসহ্য হয়ে যায়। টিকিট ভেন্ডিং মেশিনগুলি বিকল থাকে। সেখানে এমন ব্যবস্থা চালু হলে ভাল।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে ক্রমেই যাত্রী সংখ্যা বাড়লেও রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের অধীনে টিকিট কাউন্টারের কর্মী সংখ্যা যথেষ্ট কম। এর জেরে কাউন্টারের সংখ্যা কমছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন যাত্রীরা। এই অ্যাপ চালু হলে সেই দুর্ভোগ কমবে। তবে যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, তাঁরা কী ভাবে এই সুবিধা পাবেন সেই প্রশ্ন উঠছে।
রয়েছে অন্য আশঙ্কাও। রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের এক কর্মীর ধারণা, “এই ব্যবস্থার বিধি নিয়ে আমরাও সংশয়ে রয়েছি। কারণ অনেক অসৎ যাত্রী হাওড়া যাওয়ার জন্য খড়্গপুর থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠে পরে টিকিট পরীক্ষক দেখে কম দূরত্বে টিকিট কেটে নিতে পারে। এতে রেলের ক্ষতি বাড়তে পারে!” তবে প্রাথমিক ভাবে টিকিটের লাইন কমবে বলে ধারণা নিত্যযাত্রীদের। অ্যাসোসিয়েশন ফর মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু পালের কথায়, “স্বল্প দূরত্বে শহরতলির ট্রেনের টিকিটে এই অ্যাপ চালু হলে টিকিটের লাইনে ভিড় কমবে। কারণ, এখন তো হাতে হাতে স্মার্টফোন। তবে এর জন্য রেলকেও নজরদারি বাড়াতে হবে।’’
নতুন এই পরিষেবা নিয়ে নবীন প্রজন্ম উৎসাহী। এই পরিষেবার চাহিদা রয়েছে খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়াদেরও। টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দিন শেষ বলে তাঁদের মত। আইআইটি-র মেকানিক্যাল বিভাগের গবেষক ছাত্র অভিমন্যু কর বলেন, “অনলাইন শপিং থেকে অনলাইন টিকিটে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তবু অসংরক্ষিত টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট হয়। এ বার অ্যাপ চালু হলে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব। আমার মনে হয় এটা রেলের একটা যুগান্তকারী
পদক্ষেপ হবে।’’
কিন্তু কবে এই শাখায় অ্যাপ চালু হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য-জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘পূর্ব ভারতের মধ্যে একমাত্র পূর্ব রেলে অসংরক্ষিত টিকিট কাটার এই অ্যাপ চালু হয়েছে। কারণ, ওই শাখায় শহরতলির যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি। চাহিদা বুঝে দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও এই পরিষেবা চালু করা হবে।’’