‘নজরে’ তদন্তে নাম ওঠা অন্য মহিলারা

খাগড়াগড়-কাণ্ডে তদন্তের সূত্রে উঠে আসে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার নাম, যেখানে ১৮ থেকে ২৫ বছরের তরুণীদের জেহাদের পাঠ দেওয়া হত বলে জেনেছিলেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১১
Share:

সে-দিন: খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে ধৃত গুলসোনা ও আলিমা বিবি। ফাইল চিত্র

বিস্ফোরণের পরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল দুই মহিলা। পিস্তল দেখিয়ে বলেছিল ফিরে যেতে, অভিযোগ পড়শিদের। খাগড়াগড়ে ঘটনাস্থল থেকে ধৃত ওই দুই মহিলা গুলসোনা বিবি ও আলিমা বিবির শুক্রবার ছ’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল এনআইএ আদালত। তবে এই দু’জন ছাড়াও ঘটনার তদন্তে জঙ্গি-যোগে পরপর বেশ কিছু মহিলার নাম পায় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। কিন্তু তাদের কেউ আর গ্রেফতার হয়নি। এনআইএ-র এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য দাবি, ওই সব মহিলার গতিবিধি নজরে রেখেছেন তাঁরা।

Advertisement

খাগড়াগড়-কাণ্ডে তদন্তের সূত্রে উঠে আসে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসার নাম, যেখানে ১৮ থেকে ২৫ বছরের তরুণীদের জেহাদের পাঠ দেওয়া হত বলে জেনেছিলেন গোয়েন্দারা। এনআইএ সূত্রে জানা যায়, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমান— এই চার জেলার জনা পঁচিশ তরুণীর যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়। আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছুরি-ভোজালি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত তাদের। তদন্তকারীদের দাবি, গুলসোনা ও আলিমা আইইডি তৈরি করতেও পারত।

এনআইএ সূত্রে জানা যায়, তদন্তে মঙ্গলকোটের ফরিদা বিবি, আয়েষা বিবি, বীরভূমের জরিনা বিবি, জিন্নাতুর বিবি, নদিয়ার খানসা বিবি, ফতিমা বিবি-সহ বেশ কয়েক জন মহিলার নাম জানা যায়। কী ভাবে তারা শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ দিত, নানা জেলায় ঘুরে কিশোরীদের মাদ্রাসায় আনত, সে সব তথ্যও মেলে। ফরিদার এক আত্মীয় শুক্রবার বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর আমাদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ নেই।’’ আয়েষারও খোঁজ নেই বলে দাবি পরিজনদের। তদন্তকারীদের দাবি, ওই মহিলাদের কয়েক জন সম্ভবত বাংলাদেশে চলে গিয়েছে।

Advertisement

খাগড়াগড়: এক নজরে

• বিস্ফোরণ (নিহত ২, জখম ১) ২ অক্টোবর, ২০১৪ (বেলা ১২টা ১৫ মিনিট-১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে)
• প্রথম তদন্তকারী সংস্থা: বর্ধমান পুলিশ (২ অক্টোবর, ২০১৪)
• দ্বিতীয় তদন্তকারী সংস্থা: সিআইডি (৬ অক্টোবর, ২০১৪)
• তৃতীয় তদন্তকারী সংস্থা: জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (১০ অক্টোবর, ২০১৪)
• এখনও পর্যন্ত ধৃত: ৩০
• পলাতক: ৩
• চার্জশিট (২০১৫-২০১৯): এখনও পর্যন্ত ৫টি
• মামলার চার্জগঠন: ১৬ জুলাই, ২০১৬
• সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু: ১৩ জুলাই, ২০১৭
• সাক্ষী: ৫টি চার্জশিটে এখনও পর্যন্ত ৬৩০
• এখনও পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ: ১৩ জনের

এনআইএ সূত্রে জানা যায়, খাগড়াগড়ের সূত্রে ভারতের মাটিতে জমিয়ত-উল-মুজাহিদিনের সঙ্গে জেএমবি-র (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) আঁতাঁত সামনে এসেছিল। জেএমবি-র পরামর্শেই নারী জঙ্গি বাহিনী তৈরি হয় বলে ধারণা। আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের ভিডিয়ো টেপ-ও মিলেছিল খাগড়াগড়ে।

ওই দু’জন ছাড়া বাকি মহিলাদের ধরা গেল না কেন? এক এনআইএ কর্তা বলেন, “ওই মহিলাদের অনেকেরই বিয়ে হয়েছিল জঙ্গিদের সঙ্গে। সেই সূত্রেই তারা জেহাদি প্রশিক্ষণ নেয়। তাদের গতিবিধি নজরে রয়েছে। তদন্ত কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement