হাসপাতালের বিছানা থেকে অভিযুক্ত স্বামীর গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন রেণু খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
স্বামীর পাশে বেঘোরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎই তীব্র যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে যায়। চিৎকার করলেও তা শোনা যায়নি। কারণ, মুখে বালিশ চাপা। ডান হাতে তখন বার বার ভারী হাতুড়ির ঘা পড়ছে। তত ক্ষণে হাতুড়ির ঘা মেরে ডান হাত থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। এর পর টিন কাটার বিরাট কাঁচি দিয়ে ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়া হয় রেণু খাতুনের। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেণুর স্বামী শের মহম্মদ ওরফে সরিফুলের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে। রেণুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ।
শনিবার রাতে ওই নৃশংস ঘটনার পর এই মুহূর্তে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেণু। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রেণুর জ্ঞান ফিরেছে। আপাতত সুস্থ রয়েছেন তিনি। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর ডান হাতে তীব্র যন্ত্রণা রয়েছে। সে অবস্থাতেও রেণুর ইচ্ছাশক্তি অটুট রয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কোনও মতে বলেছেন, ‘‘লড়াই চালিয়ে যাব!’’ অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতারের দাবিও তুলেছেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘‘যাঁরা আমার হাত কেটে নিয়ে ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চক্রান্তে জড়িত, তাঁদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’’
রেণুর বাপেরবাড়ির দাবি, সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পাওয়ার পর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যাবেন বলে আশঙ্কা ছিল শের মহম্মদের। সে কারণেই স্ত্রীর উপর এই পাশবিক অত্যাচার করেছেন। ঘটনার অভিঘাতে অচৈতন্য স্ত্রীকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধুবান্ধবেরাও। ওই হাসপাতালে রেণুকে ভর্তি করানোর পর রেণুর স্বামী পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।
বাপের বাড়ির লোকজনের আরও দাবি, রেণুর শ্বশুর তাঁদের ফোন করে কাটা হাতটি নিয়ে যেতে বলেন। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওই কাটা হাতটি নিয়ে প্রথমে কাটোয়া হাসপাতাল পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকে বর্ধমান এবং পরে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রেণুকে। এই ডামাডোলে অবশ্য রেণুর শ্বশুরবাড়ির লোকজনও বেপাত্তা হয়েছেন বলে দাবি।