ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পিনারাই বিজয়ন।
বহিষ্কৃত হওয়ার আগে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন করে উস্কে দিয়েছেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়!
দল থেকে বহিষ্কারের আগে ঋতব্রত শুধু যে প্রকাশ-বৃন্দা কারাটকে আক্রমণ করেছেন, তা নয়। কেরলের পিনারাই বিজয়ন ও তাঁর অনুগামীদেরও নিশানা করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ কেরল শিবির এখন আলিমুদ্দিনের নেতাদের দিকেই আঙুল তুলছে। তাঁদের অভিযোগ, কেন ঋতব্রতকে এত দিন ধরে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে! আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। কেরল শিবিরের অভিযোগ, তিনিও ঋতব্রতকে এত দিন আড়াল করে এসেছেন।
এমনিতেই আগামী পার্টি কংগ্রেসের আগে দলের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে ইয়েচুরি তথা পশ্চিমবঙ্গ নেতৃত্বের সঙ্গে কারাট শিবির তথা কেরল নেতৃত্বের সংঘাত তুঙ্গে। ইয়েচুরি বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেস ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার রাস্তা খুলতে চাইলেও কারাট শিবিরের তাতে প্রবল আপত্তি। তাঁরা ‘একলা চলো’ এবং শুধু বামপন্থী দলগুলির জোটের পক্ষে। শেষ পলিটব্যুরো বৈঠকেও এই নিয়ে কোনও ফয়সালা হয়নি। রাজনৈতিক রণকৌশলের খসড়া চূড়ান্ত করতে অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবই যাবে, নাকি দু’টি রাজনৈতিক লাইনই পাঠানো হবে, তা ঠিক করতে ২ অক্টোবর ফের পলিটব্যুরোর বৈঠক ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চ্যানেলে তোপ, তাই ঋতব্রতকে বহিষ্কার
এর মধ্যেই দুই শিবিরের সংঘাত বাড়িয়েছেন ঋতব্রত। একটি ইংরেজি সংবাদ চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কেরলে আরএসএস-সিপিএমের কর্মীদের মধ্যে খুনোখুনির দায় বিজয়ন সরকার এড়াতে পারে না। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়েরি বালকৃষ্ণন দু’জনেই কান্নুর জেলার নেতা। সেখানে পার্টি কর্মীদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে! জননেতা হওয়া সত্বেও ভি এস অচ্যুতানন্দনকে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
বিজয়ন-অনুগামীদের দাবি, ঋতব্রতকে বিজেপি ‘ব্যবহার’ করছে। এবং তাঁকে কেরলেই সিপিএমের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে বিজেপি। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র লড়াই বামেদের সঙ্গে নয়। বিজেপি সূত্রের খবর, ঋতব্রতর সঙ্গে দলের নেতারা যোগাযোগ রাখছেন। আপাতত তাঁকে দিল্লিতে বিজেপি-র নীতির প্রতি সহানুভূতিশীল কোনও একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্কে’ যোগ দিতে বলা হবে। পরে লোকসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন।
ঋতব্রত অবশ্য আজ জানিয়েছেন, তিনি কোনও দলে যাচ্ছেন না। তবে সাংসদ পদ ছাড়ছেন না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলার স্বার্থই আমার অগ্রাধিকার ছিল, আছে এবং থাকবে।’’