চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন আরতিদেবী।— নিজস্ব চিত্র
কামদুনির খুন ও গণধর্ষণ মামলায় দোষীদের শাস্তি ঘোষণার ১২ ঘণ্টা আগে ওই তল্লাটের একটি স্কুলের এক শিক্ষিকার বারাসতের বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট চালাল দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষিকাকে মারধর ও তাঁর হেনস্থারও। ঘটনাচক্রে এমন এক শিক্ষিকার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে, যিনি কামদুনির ঘটনার পরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন কামদুনি যান, সে দিন তিনি নিহত ছাত্রীর বাড়িতে তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে ছিলেন এবং তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে বিশদে ঘটনাটি জানান। যদিও পুলিশ বলছে, শুক্রবার রাতের এই ঘটনা নিছকই ডাকাতি। কামদুনির মামলার রায়ের সঙ্গে এর কোনও রকম যোগ নেই। তবে তাতে অবশ্য ঘটনার গুরুত্ব কমছে না।
ঘটনাটি ঘটেছে বারাসতের কাজীপাড়ার আম্বিকা সিটি এলাকায়। ওই বাড়ির বাসিন্দা আরতি পাল কামদুনি জুনিয়র স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। দুষ্কৃতীরা তাঁর ছেলেকেও ভোজালি দিয়ে আঘাত করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পরে শনিবার স্কুলে যেতে পারেননি আরতিদেবী। এ দিকে সব চাবি তাঁর কাছে থাকায় বন্ধ রাখতে হয়েছিল স্কুলও। গত তিন বছরে এলাকায় এই প্রথম ডাকাতির ঘটনা ঘটল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ছেলে অরিদীপের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকেন আরতিদেবী। বছর কয়েক আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর স্বামী। অরিদীপ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময়ে দু’জনই ঘুমোচ্ছিলেন। রাত আড়াইটে নাগাদ চার জনের সশস্ত্র ডাকাতদল প্রথমে বাড়ির সদর দরজার তালা ভাঙে। তার পরে কাঠের দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। গভীর রাতে বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখে জেগে ওঠেন আরতিদেবী।
শনিবার সকালে যখন আরতিদেবী রাতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করছেন, তখনও তাঁর গলায় আতঙ্কের রেশ। তিনি বলেন, ‘‘জেগে উঠতেই ডাকাতেরা আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে দেয়। বলে, শব্দ করলেই খুন করে দেবে।’’ ওই ঘরে আরতিদেবীর পাশেই ছিলেন অরিদীপ। তিনি ডাকাতদের বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।
আরতিদেবীর অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেয়। তিনি জানান, অরিদীপ ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে দুষ্কৃতীদের এক জন তাকে চুপ করতে বলে তার মাথায় ভোজালি দিয়ে আঘাত করে। এর পরে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ২০ ভরি সোনার গয়না ও নগর ১২ হাজার টাকা নিয়ে পালায় তারা। এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ব্যাঙ্ক থেকে ওই গয়না বাড়িতে এনে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন আরতিদেবী।
আক্রান্ত শিক্ষিকার কথায়, ‘‘ডাকাতেরা দু’টি মোবাইলও লুঠ করেছে। ডাকাতি করে চলে যাওয়ার সময়ে ওরা হুমকি দেয়, পুলিশকে জানালে খুন করে ফেলবে।’’