অভিষেক এবং কল্যাণ। ফাইল ছবি।
অভিষেক-বিতর্কে বুধবার ত্রি-ধারা। এক: ডায়মন্ড হারবারের উপর দিয়ে গঙ্গাসাগরমুখী জনস্রোত। দুই: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় এলাকা ডায়মন্ড হারবারে পঞ্চাশ হাজার মানুষের কোভিড পরীক্ষা। তিন: রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি দু’মাস বন্ধ রাখা নিয়ে অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মত’-কে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল বলে এক তৃণমূল সাংসদের প্রকাশ্য মন্তব্য।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে ৩০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করাবেন। দিনের শেষে সংখ্যাটি পৌঁছয় ৫৩ হাজারে। তার মধ্যে পজ়িটিভ ১১৫১ জন। সমন্বয় রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে প্রায় ২০০ কন্ট্রোল রুম। এই গোটা পরিকল্পনার জন্য সাংসদ হিসেবে বিভিন্ন মহলের সাধুবাদও পেয়েছেন অভিষেক। রাজনৈতিক স্তরে বিতর্ক চললেও অভিষেকের এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টরা।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ডায়মন্ড হারবার প্রশাসনকে যে ভাবে মাঠে নামানো হয়েছে, তার জন্য অভিষেকের প্রশংসা করেছেন চিকিৎসকের অনেকেও। আজ বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে ‘সেফ হোম’ পরিদর্শনে যাওয়ার কথাও রয়েছে অভিষেকের। টুইট বার্তায় রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষাকে ‘জন্মদিনে স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি নিজেও। আবার ডায়মন্ড হারবারে যখন করোনা মোকাবিলায় এই তৎপরতা চলছে তখন তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে প্রশাসনিক স্তরে প্রত্যাশিত ও উপযুক্ত পদক্ষেপ কিন্তু এ দিনও সে ভাবে চোখে পড়েনি।
জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোনও সংখ্যা পাওয়া না গেলেও একটি সূত্র জানিয়েছে, দিনভর কলকাতা হয়ে অসংখ্য বাস এবং অন্যান্য পরিবহণে কয়েক হাজার মানুষ গঙ্গাসাগরে পৌঁছেছেন। এই প্রেক্ষাপটেই আবার সব কর্মসূচি বন্ধ রাখা নিয়ে অভিষেকের বক্তব্যের বিরুদ্ধে এ দিন প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বলেছিলেন, ওই মত তাঁর ব্যক্তিগত।
কল্যাণের মতে, ‘‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদটি সর্বক্ষণের। তাই এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত কোনও মত থাকতে পারে না। অনেক বিষয়ে আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই তা প্রকাশ্যে বলা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধাচারণ। এ ভাবে রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।’’ এই সঙ্গে খোঁচা দিয়ে কল্যাণ এ দিন বলেন , ‘‘বর্ষবরণের দিনে ডায়মন্ড ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল সেখানে কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। মুম্বইয়ের গায়ককে এনে জলসা হয়েছিল। সেখানে কি সংক্রমণের সম্ভাবনা ছিল না?’’ এ দিকে, ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের উদ্যোগে রেকর্ড সংখ্যক করোনা পরীক্ষা নিয়ে বিরোধীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষাপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যে পরীক্ষার কিট কমছে আর ডায়মন্ড হারবারে বেড়ে গেল। রাজ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে আর সেখানে তা কমে গেল। একটা জায়গাকে মডেল তৈরি করতে এ সব করা হচ্ছে।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘ওই মডেল দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী সারা রাজ্যে তা চালু করে দিন। সকলের পরীক্ষা হোক, সকলে মাস্ক পান।’’