Kalosona Mondal

দলবিরোধী কাজের নালিশ, বহিষ্কৃত কালোসোনা

মঙ্গলবার সকালে সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়ার কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৪:৫২
Share:

কালোসোনা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

দল থেকে বহিষ্কার করা হল বীরভূম জেলা বিজেপি-র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল এবং প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস (পলাশ) মিত্রকে। এই বহিষ্কারের পিছনে দলের কর্মীদের একাংশ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তুললেও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দলবিরোধী কাজের জন্য রাজ্যের নির্দেশ মতোই ওই দুই বিজেপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়ার কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সভাপতি নির্মল মণ্ডল-সহ অন্য নেতারা। শ্যামাপদ জানান, দলবিরোধী কাজের জন্য কালোসোনাকে তিন বছর এবং পলাশকে চার বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কালোসোনা ও পলাশ, দু’জনেরই দাবি, তাঁরা কোনও রকম দলবিরোধী কাজ করেননি। এক ধাপ এগিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কালোসোনা বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই শ্যামাপদ মণ্ডল প্রমাণ করতে পারবেন না। আর যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ওঁর জুতো বইব!’’ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলই খুশি হবে। মাংস-ভাত খাওয়াবে! সেখানে উনি (শ্যামাপদ) ডাক পাবেন।’’

তুলনায় সুর নরম পলাশের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কোনও দলবিরোধী কাজ করিনি। তবে জেলা সভাপতি মনে করেছেন, দলের নিরাপত্তা এবং ওঁর নিরাপত্তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তাই হয়তো নিয়েছেন। আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি। তবে আমার পদ থাকল কিনা, আমি সাধারণ কর্মী থাকলাম কিনা, ভেবে লাভ নেই। সাধারণ সমর্থক হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাব।’’

Advertisement

জেলা সভাপতির দাবি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে মদত দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় দলবিরোধী বক্তব্যে মদত দেওয়া-সহ আরও উস্কানিমূলক কাজ করেছেন কালোসোনা ও পলাশ। যার জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। যদিও জেলা বিজেপি-র একটি সূত্রেরই দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এই বহিষ্কার। শ্যামাপদ মণ্ডল জেলা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের অন্দরে সংঘাত শুরু হয়। মূলত প্রাক্তন জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে। বহিষ্কৃত হওয়া ওই দুই বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণের শিবিরে ছিলেন। কিন্তু শ্যামপাদ ক্ষমতায় আসার পরেই দলে তাঁদের প্রাধান্য কমেছিল। এমনকি বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাঁদের সে ভাবে দেখা যাচ্ছিল না।

বেশ কিছু ঘটনায় ওই দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশও ঘটে। যেমন, গত বছর নভেম্বর মাসে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনের পরেই শ্যামাপদের পদত্যাগের দাবি তুলে সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়া কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতিরা। এমনকি তাঁরা কলকাতায়, বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে পৌঁছেও বিক্ষোভ দেখান। তা ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতেও বর্তমান জেলা সভাপতিকে নিয়ে নানা রকম পোস্ট করা হয়।

দল সূত্রে খবর, দিন কুড়ি আগে বেশ কিছু প্রশ্ন-সহ একটি চিঠি কালোসোনা ও পলাশকে পাঠান শ্যামাপদ। তাতে বিক্ষুদ্ধ কর্মীদের কেন উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয়। তার পাল্টা পলাশ কিছু প্রশ্ন তুলে শ্যামাপদকে চিঠি পাঠান। সেটাও দল ভাল চোখে দেখেনি।

বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকলেও রামকৃষ্ণ রায় বেশ কয়েক মাস যাবৎ সেই দ্বন্দ্ব নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর অনুগামীরা সংঘাতে জড়ালেও তিনি কখনও প্রকাশ্যে সে-সবে জড়াননি। দলের কর্মসূচিতে নিয়মিত শামিলও হয়েছেন। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে শ্যামাপদ জেলায় বালিঘাট থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা এবং পাথর কারবার নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement