মা-বাবার সঙ্গে কালিম্পঙের ছাত্রী রিয়া কালিকোটে। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শুধুমাত্র স্কুলে পৌঁছতেই প্রতি দিন ৬ কিলোমিটার রাস্তা পার করতে হত তাঁকে। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গিয়েছে, নেপালি ভাষায় রাজ্যে প্রথম হয়েছেন কালিম্পঙের ছাত্রী রিয়া কালিকোটে।
শতাংশের বিচারে রিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ৯৪.৫। নেপালি, ইংরেজি, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান ছিল তাঁর বিষয়। কালিম্পং জেলার লোয়ার সিন্দেবং বস্তিতে বাড়ি রিয়াদের। বাবা চন্দ্রকুমার কালিকোটে চাষবাস করে সংসার চালান। সে সংসারের হাল ধরে রয়েছেন মা ভারতী কালিকোটে। ছ’জনের সংসারে আয় বাড়াতে বাড়তি রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন চন্দ্রকুমার। চাষবাসের পাশাপাশি দুধ বিক্রি করে যেটুকু রোজগার হয়, তা দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন।
সংসারে টানাটানি থাকলেও তা রিয়ার পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল দেখে তিনি বলেন, ‘‘এত ভাল ফল যে হবে, আশাই করতে পারিনি। পরিবার থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলেই খুব খুশি। সকলে সাহায্যেই আজ এই ফল করতে পেরেছি।’’
পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি বেশ ভাল ভাবেই জানেন রিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়। চাষবাস থেকে বাবার সামান্যই উপার্জন। বাড়িতে এক দিদি ও দুই বোনেরাও পড়াশোনা করছে। ভবিষ্যতে আইপিএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসব। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় সরকার যদি কোনও সাহায্য করে, তবে সুবিধে হয়।’’
রিয়ার স্বপ্নপূরণে পরিবার তাঁর পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রকুমার। তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে মাঠে ফসল ফলাতে হয়। সেই সঙ্গে গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়েছি। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছি। রিয়া বলছে সে পুলিশ অফিসার হবে। ওর স্বপ্নের দিকে এগিয়ে চলুক। জীবনে কিছু হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াক।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।