চন্দ্র মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের হাসি চাঁদের আলো হয়ে ফুটেছে হুগলির হরিপালের চন্দ্র মণ্ডলের মুখে। ৪৯৪ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন চন্দ্র। হরিপালের খামারগাছি এলাকার রেললাইনের পাশে ঝুপড়িতে থাকেন চন্দ্র। টালির চাল এবং ইটের এবড়োখেবড়ো দেওয়ালের ঘরে বড় হওয়া চন্দ্রের এই সাফল্য এখন চাঁদের আলোর মতোই উজ্জ্বল। ওই আলোর মধ্যেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার অন্ধকার লুকিয়ে রয়েছে।
হরিপালের খামারগাছি এলাকায় রেললাইনের পাশের ঝুপড়িতে থাকেন চন্দ্র। হরিপালের গুরুদয়াল ইনস্টিটিউটশনের ছাত্র তিনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বাণিজ্য বিভাগে। অতঃপর সাফল্য এসেছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। চন্দ্রের এই কৃতিত্বে উৎসবের চেহারা দেখা দিয়েছে খামারগাছির ওই ঝুপড়িতে। সাফল্যের আলো গায়ে মেখে লাজুক চন্দ্র বলছেন, ‘‘টিভি-তে আমার নাম দেখাচ্ছে দেখলাম। এটা দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। ভাল ফল হবে আশা করেছিলাম। তবে এতটা আশা করিনি। যে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়তাম, তাঁরা খুব সাহায্য করেছেন।’’
চন্দ্রের বাবা দীনেশ মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা কনক মণ্ডল অন্যের বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করেন। তাই চন্দ্রের সাফল্যের আলোর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে শঙ্কার অন্ধকারও। বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র চন্দ্র আগামিদিনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চান। সেই পথ যে ঝুপড়ির ইটের দেওয়ালের থেকে আরও বেশি এবড়োখেবড়ো তা জানেন চন্দ্র এবং তাঁর বাবা-মা। তাই সরকারি সাহায্যের প্রত্যাশায় তাঁরা। বাবা দীনেশ বলছেন, ‘‘ছেলেকে কষ্ট করে পড়াশোনা শিখিয়েছি। ওর জন্য আমি গর্বিত। চেষ্টা করব, বাড়তি উপায়ের জন্য আরও বেশি কাজ করে ওকে পড়াশোনা শেখানোর। তবে আমার বয়স হচ্ছে। তাই এই সময়ে আমাকে সাহায্য করলে খুব ভাল হয়।’’
মা কনকের কথায়, ‘‘ছেলের সাফল্যে আমি খুব খুশি। ওর খুব ইচ্ছা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। তবে অর্থের জন্য এগোতে পারব না। আমাদের অবস্থা তো দেখছেনই।’’
ক্রিকেট খেলতে ভাল লাগে চন্দ্রের। তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইতেই সোজা ব্যাটে খেললেন। চন্দ্রের উত্তর, ‘‘আমার ইচ্ছা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়ার।’’ কিন্তু অর্থ আসবে কোথা থেকে? এ বারও আবারও তাঁর স্ট্রেট ড্রাইভ, ‘‘কী ভাবে অর্থ আসবে জানি না। সরকার সাহায্য করলে এগোব। না হলে পারব না।’’