Mohammad Asif

মৃত্যুর সময় মানুষের অভিব্যক্তি কেমন, ছবি তুলে বিক্রির জন্যই কি খুন করেছিল আসিফ?

কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি দিন। রহস্যের সমুদ্রে ডুব দিয়ে রোজই নানা নুড়ি তুলে আনছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালিয়াচক শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০৮:৫৪
Share:

ফাইল চিত্র।

মৃত্যুর সময় মানুষের অভিব্যক্তি কেমন হয়? মানুষের মুখে মৃত্যুর ছায়া কী ভাবে ফুটে ওঠে? সেই সময়ের ছবি এবং ভিডিয়ো তুলে বিপুল টাকার বিনিময়ে ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য়ই কি পরিবারের চার জনকে খুন করেছিল আসিফ? কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

Advertisement

১৯ জুন কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি দিন। রহস্যের সমুদ্রে ডুব দিয়ে রোজই নানা নুড়ি তুলে আনছেন তদন্তকারীরা। এ বার তাঁদের নজর পড়েছে এই বিষয়টিতেও। গোয়েন্দারা নিশ্চিত, আসিফই ঘটিয়েছে এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। অর্থের জন্যই সে যে খুন করেছে তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এত দূর তদন্তের পর। কিন্তু, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন আসিফ তার বাবাকে খুনের আগেই প্রায় যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। বাকি ছিল শুধু বসতবাড়িটাই। তা হলে কপর্দকহীন বাবাকে শুধু কি বাড়ির দখল নিতেই খুন করেছিল আসিফ? এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। আর এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার কথাও।

কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের শুরুর দিকে মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) অনীশ সরকার বলেছিলেন, ‘‘আসিফ তার বাবা, মা, দিদা, বোন এবং দাদা সকলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল। তাঁরা যখন সকলে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তখন তাঁদের বসতবাড়ির পাশের গুদামে নিয়ে যায় সে। সেখানে কফিনের আকারে কিছু একটা তৈরি করেছিল আসিফ। সকলকে বলেছিল, তোমাদের ছবি তোলা হবে। সেটা ও সকলকে বিশ্বাসও করিয়েছিল। তার পর সকলকে সেখানে ও ডুবিয়ে দেয়।’’ আসিফের পরিকল্পনায় তৈরি রহস্যময় গুদামের চার পাশে ১৬টি সিসি ক্যামেরা পেয়েছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরা পাওয়া গিয়েছে গুদামের ভিতরেও। তদন্তকারীদের মতে, বাড়ির সকলকে খুন করে তাঁদের মৃত্যুর সময়ের অভিব্যক্তি ছবি এবং ভিডিয়োর মাধ্যমে ধরে রাখতে চেয়েছিল সে। তার উদ্দেশ্য ছিল, ওই ছবি এবং ভিডিয়ো মোটা টাকায় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিক্রি করা। তবে এখনও পর্যন্ত সেই ধরনের ছবি হাতে পাননি তদন্তকারীরা।

Advertisement
আরও পড়ুন:

তদন্তকারীদের ধারণা, টর সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল আসিফ। অনেকেই বলে থাকেন, সাধারণ গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যে তথ্য পাওয়া যায় তা আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাকি বিপুল তথ্য আসলে রয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে এবং তার নাগাল পাওয়া যায় ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেই। শুধু তথ্যই নয়, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে চলে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মও। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই ডার্ক ওয়েবেই টাকার বিনিময়ে মানুষের মৃত্যুর মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল আসিফ। আসিফের ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার ঘেঁটে সেই সূত্রের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছে ফরেন্সিক দফতর। তদন্তকারীদের মতে, কোনও নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট থেকে এমন রোমহর্ষক কায়দায় খুনের পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। সে কোন কোন ওয়েবসাইটে ঘোরাফেরা করত তারও হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের আপলোড হিস্ট্রিও ঘেঁটে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, আসিফের ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার-সহ নানা ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলি নিয়ে লাগাতার চর্চা প্রয়োজন। তা থেকে হত্যাকারীর মনের নাগাল পাওয়াও সহজ হবে বলে তাঁদের ধারণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement