কৈলাস বিজয়বর্গীয়। —ফাইল চিত্র।
বাংলায় বিপর্যয়ের দায় কার, তা নিয়ে চাপানউতর চলছে বিজেপি-তে। তাঁর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করছেন দলের ছোট-বড় নেতা। এমনকি তাঁকে কটাক্ষ করে পোস্টার পড়েছে খাস দলের দফতরেই। কিন্তু এ সব থেকে বহু দূরে ভোটের আগে বাংলায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হয়ে আসা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রাজ্য নেতৃত্ব যখন ভোটের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত, সেই সময় তিনি মগ্ন হনুমান ভজনায় এবং নিজেই তা তুলে ধরলেন নেটমাধ্যমে।
ভোটের আগে ২০০ আসন পাওয়ার আত্মবিশ্বাসে টগবগ করলেও, ফল বেরনোর পর থেকে বিজেপি-র বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। কৈলাস নিজেও ফিরে গিয়েছেন মধ্যপ্রদেশে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধছে রাজ্য বিজেপি-তে। ভোটের আগে তৃণমূল থেকে নেতা ভাঙিয়ে দল ভারী করা নিয়ে কটাক্ষ জুটছে কপালে। কলকাতায় দলীয় দফতরের বাইরেই পোস্টার পড়েছে তাঁর নামে। তাতে ‘টিএমসি সেটিং মাস্টার’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে তাঁকে।
এ সব নিয়ে নেটমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়ায়ই দেননি কৈলাস। বরং শনিবার তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে উঠে এসেছে হনুমান বন্দনার ছবি। তিনি জানিয়েছেন, হনুমানের চরণে ১১০০ কিলো আমের অর্ঘ্য নিবেদন করেছেন। তবে এই প্রথম নয়, বিগত কয়েক দিন ধরেই ধারাবাহিক ভাবে তাঁর টুইটারে উঠে এসেছে পুজো-অর্চনার ছবি ও ভিডিয়ো। কখনও মহেশ নবমী পালন করতে দেখা গিয়েছে, কখনও যমুনার পাড়ে আরতি করতে দেখা গিয়েছে, কখনও আবার শিবলিঙ্গে জল ঢালতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
দু’দিন আগে মথুরার রমণ রেতি আশ্রমে যাওয়ার ছবি দিয়ে ‘গোপালের কাছে মুক্তি’র উপায়’ও চাইতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাই প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক এই টানাপড়েন থেকেই কি মুক্তি চাইছেন কৈলাস? তার জন্যই কি ঈশ্বররের শরণাপন্ন হচ্ছেন? এর উত্তর যদিও অধরা। তবে বিজেপি-র একাংশের মতে, বাংলায় দলের ভরাডুবির জন্য শুরু থেকেই কৈলাসের দিকে আঙুল উঠছে। ভোটের আগে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া, মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, এ সব এখন গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধছে কৈলাসের। তাই তিনি শান্তির খোঁজ করবেন, এমনটাই স্বাভাবিক।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে ‘লক্ষ্য’ থেকে অনেক আগেই বিজেপি থেমে যাওয়ার পর কৈলাস জানিয়েছিলেন, বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসে ভোট দিয়েছেন। কোথায় খামতি রয়ে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। কিন্তু তার পর থেকে আর বাংলায় বিজেপি-র পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে শোনা যায়নি তাঁকে। এমনকি নেটমাধ্যমে বিজেপি-র অন্য নেতারা যখন মমতাকে একনাগাড়ে বিঁধে চলেছেন, সেই সময় বাংলা নিয়ে তাঁর নীরবতা চোখে পড়ার মতো।