রাম নবমীর মিছিলে অস্ত্র নিয়ে হাঁটার অভিযোগে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করার পরই পাল্টা হুঙ্কার দিয়েছিলেন কৈলাস বিজবর্গীয়রা। বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, দম থাকে তো দিলীপদা-কে গ্রেফতার করুন!’’ চব্বিশ ঘণ্টা পর হুঙ্কারের তেজ আরও বাড়িয়ে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস যেমন স্পষ্ট বলেন, ‘‘দিদি যেন ভুলে না যান, আমরাও কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছি। চিট ফান্ড কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের খাঁড়া ওঁদের ওপর ঝুলছে। ধরপাকড় শুরু হলে দিদির মন্ত্রিসভার অর্ধেকটাই খালি হয়ে যাবে।’’
যদিও এক বার সমঝোতার ইঙ্গিতও দেন বিজেপি-র এই কেন্দ্রীয় নেতা। সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে জানান, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন। আবার পর ক্ষণেই হুমকি দিয়ে বলেন, মামলা না-তুললে জেল ভরো আন্দোলন করবে বিজেপি।
বস্তুত দিলীপবাবুদের বিরুদ্ধে পুলিশ অস্ত্র আইনে মামলা করলে বিজেপির আস্ফালন যে বাড়বে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। বিজেপি সে পথেই হেঁটেছে। এমনকী বিজেপি সভাপতি খোলাখুলিই বলেছেন, ‘‘এর থেকে অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করব।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে মদের দোকানের ঝাঁপ কি ভূতে খুলেছে!
তবে বাস্তব হল, এর পরেও ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের বাইরের ছবিটার সঙ্গে অন্দরের কাহিনির ফারাক রয়েছে। রাহুল সিংহরা বাইরে হম্বিতম্বি করলেও, দেখা গিয়েছে অস্ত্র নিয়ে হাঁটার ঘটনায় জেলায় জেলায় পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছে তাতে কিছুটা জেরবার বিজেপি। আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যে সমর্থকরা মিছিলে অস্ত্র নিয়ে হেঁটেছিলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজ দেখে পুলিশ এখন তাদের খোঁজ শুরু করেছে। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে। এই অবস্থায় সঙ্ঘ ও বিজেপির অনেক কর্মীই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এমনকী দলের কাছে আইনি সাহায্য চেয়ে চিঠি, টেক্সট বার্তা উপচে পড়ছে রাজ্যের সদর দফতরে। দলের এক নেতা বলেন, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে খড়্গপুর ছাড়াও চুঁচুড়ায় মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে জামিন অযোগ্য একটি ধারাতেও মামলা হয়েছে। ফলে এখনই আইনি পরামর্শ না নিলে আদালতে আদালতে দৌড়ে জেরবার হতে হবে। সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় দলের আইনজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দিলীপবাবু।
বিজেপির হুমকিতে না দমে মমতা এ দিনও তাঁদের তীব্র সমালোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেও হিন্দু, কিন্তু বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতিতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের প্রথা নেই। যারা তা করছেন, তাদের আসল উদ্দেশ্য সমাজে বিভাজন ঘটানো। এবং ধমকে চমকে শান্তি নষ্ট করা।
তবে মমতার বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছে বিজেপিও। তা প্রমাণ করতে সংখ্যালঘুদের এক পরবে অস্ত্র হাতে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের একটি ছবি তারা প্রকাশ করেছে। তাঁদের দাবি, অস্ত্র আইনে মদনের বিরুদ্ধেও মামলা করুক পুলিশ।