বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর একান্ত ভরসার গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এর তদন্তে হতাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের তদন্তকারীদের উপর ভরসা না রেখে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের তদন্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিচারপতিকে এমনও বলতে শোনা গিয়েছে যে, অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে তিনি আলো দেখতে পাচ্ছেন না। এমনকি সিবিআইয়ের থেকে সিট ভাল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শিক্ষায় নিয়োগ সংক্রান্ত একের পর এক দুর্নীতিতে সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই কী করবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নভেম্বরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখনও ঢিমেতালে চলছে তদন্ত। আদালত বলার পরও কিছুই পদক্ষেপ করল না তারা।’’
সোমবার প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভারও সিবিআইকেই দিয়েছেন বিচারপতি। সেই মর্মে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগের দায়িত্বে থাকা দুই কর্তাকে নিজাম প্যালেসে ডেকে প্রায় ঘণ্টা চারেক জেরা করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কিন্তু মঙ্গলবার বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে দিন সাতেক হইহট্টগোল হল। কিন্তু তার ফল কী হল?’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যত দূর জানি, গত এক বছরে ডজন খানেক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেষে কি তারা নোবেল প্রাইজ নেবে না কি!’’
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম উঠে এসেছে রাজ্যের প্রাক্তন এবং বর্তমান মন্ত্রীদের। এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ তদন্তের যুক্তি দিয়ে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার উপর ভরসা না রেখে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, রাজ্যের পুলিশের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। কিন্তু তদন্তের তারা কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তাই এই সিদ্ধান্ত। মঙ্গলবার তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে বলতে গিয়ে হতাশই শোনায় বিচারপতিকে। তাঁর হতাশ মন্তব্য, ‘‘কাকে তদন্ত বলব? কিছু করার ছিল না তাই সিবিআইকে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সিবিআইয়ের থেকে সিট ভাল। একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষে কোনও আলো দেখতে পেলাম না। আমি ক্লান্ত।’’
বস্তুত, স্কুল শিক্ষা নিয়োগ নিয়ে প্রায় অধিকাংশ মামলারই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিয়েছিলেন বিচারপতি। তাঁর সিদ্ধান্ত স্কুল নিয়োগ নিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রশংসাও পেয়েছিল। মঙ্গলবার সে প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, ‘‘টিভিতে, কাগজে আমার ছবি দেখাল। তাতে কী লাভ হল? কর্মহীনদের কী হবে? তাঁদের কথাই তো চিন্তা করেছিলাম। আমার একটাই উদ্দেশ্য সঠিক ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়া হোক।’’
মঙ্গলবার অন্য একটি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আসেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন দু'জনের মধ্যে কথোপকথন হয়। সেই সময়ই দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিচারপতি। এমনকি, কল্যাণের সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়েও কথোপকথন হয় বিচারপতির।
কল্যাণ বলেছিলেন, ‘‘২০১১ সাল পর্যন্ত আমার দায়িত্ব ছিল। এখন অনেক বড় বড় আইনজীবী চলে এসেছেন! আমার ভাল লাগে না। শুধু পার্থর জন্য আছি। নইলে এতে আমি থাকতাম না।’’ পাল্টা বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, তবে কি আপনাকে এ বার বহিরাগত ভাবব? মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি হয়তো ওঁকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আমার কোনও রাগ বা ক্ষোভ নেই। তিনি একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি।’’
শেষে অবশ্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত ঘটনা ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কোনও বার্তা পৌঁছেছে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।