গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
তাঁর হাত থেকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলাগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে। শুক্রবার সেই বিচারপতি সিংহের ব্যাপারেই এজলাসে বসে প্রশ্ন করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। জানতে চাইলেন, ‘‘বিচারপতি সিংহের স্বামীকে বার বার সিআইডি ডাকছে কেন বলুন তো?’’
সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের একটি মামলায় বিচারপতি সিংহের স্বামী আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দেকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। ভবানী ভবনে সিআইডির অফিসে এক দিন রাত ১১টা পর্যন্তও জেরা করা হয় বিচারপতি সিংহের স্বামীকে। সেই জেরার পর আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দাবি করেছিলেন, তাঁকে তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর নামে বয়ান লেখানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, টাকা, গাড়ি-বাড়ির টোপও দেওয়া হয়েছে। গত বুধবারই প্রকাশ্যে ওই অভিযোগ করেছিলেন প্রতাপচন্দ্র। এর পরেই শুক্রবার তাঁকে নিয়ে এজলাসে বসে প্রশ্ন করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
শুক্রবার একটি মামলায় তাঁর এজলাসে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। কথা প্রসঙ্গেই তাঁকে বিচারপতি বলছিলেন, ‘‘রাজ্যে অনেক রকম সমস্যা চলছে। সে সব দিকে নজর দিতে হবে আপনাকে। আপনার সেই ক্ষমতা আছে।’’ এর পরেই সহকর্মী বিচারপতি সিংহের স্বামীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন বিচারপতি। রাজ্যের এজির কাছে জানতে চান, ‘‘বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীকে সিআইডি প্রায়ই ডেকে পাঠাচ্ছে অন্য একটি মামলায়। কেন বলুন তো? এটা কি এতই গুরুত্বপূর্ণ মামলা?’’
প্রসঙ্গত সম্পত্তি সংক্রান্ত যে মামলায় বিচারপতি সিংহের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি সেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। সূত্রের খবর, ওই মামলায় সিআইডি কোনও রকম প্রভাব খাটানোর ভয় না পেয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এক বিধবা প্রৌঢ়ার পৈত্রিক সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় তদন্তে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছিল বিচারপতি সিংহের স্বামীর বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, বিচারপতি সিংহও এই সংক্রান্ত মামলা নিয়ে এজলাসে ধমক দিয়েছিলেন তদন্তকারীদের। এর পরেই আবেদনকারী তদন্তপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টে। যার জেরে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ।
শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন এজলাসে। রাজ্যের এজির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘সিআইডি একটু বেশিই তৎপর এই মামলাটি নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট তো সিআইডিকে কত নির্দেশই দেয়। কই, তাদের তো এত সক্রিয় হতে কখনও দেখা যায়নি।’’
বিচারপতি সিংহের এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য এজিকে কোনও উত্তর দিতে দেখা যায়নি।
এর মধ্যে শুক্রবার ছিল সম্পত্তি বিবাদ সংক্রান্ত ওই মামলায় বিচারপতি সিংহের আইনজীবী স্বামী প্রতাপচন্দ্রের হাজিরা। কিন্তু তিনি সেই মামলায় হাজিরা দেননি। আদালত সূত্রে খবর। এই নিয়ে সম্পত্তি বিবাদ মামলায় তৃতীয় হাজিরা এড়ালেন বিচারপতি সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্র।