নিজেদের চার এবং পাঁচ নম্বর দাবির দিকেই এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান জুনিয়র ডাক্তারেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পাঁচ দফা দাবির অনেকগুলিই মেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনের চার কর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তার পরেও কর্মবিরতি তোলেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। ওঠেনি স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ধর্নাও। আন্দোলনকারীদের যুক্তি, তাঁদের শেষ দুটি দাবির মধ্যেই রয়েছে হাসপাতালের পরিকাঠামো বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রের সরাসরি সম্পর্ক। এই দু’টি ক্ষেত্রে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি তাঁরা পাননি। এ নিয়ে আলোচনা চেয়েই বুধবার সকালে তাঁরা ইমেল করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। পন্থ সেই ইমেলে সাড়া দিয়ে টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন বুধবার সন্ধ্যাতেই।
পন্থকে পাঠানো ইমেলে তাঁরা জানিয়েছেন, , পাঁচ দফার মধ্যে চতুর্থ এবং পঞ্চম দফা দাবির এখনও সমাধান হয়নি। এই দুই দফার মধ্যে ১১টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। চার এবং পাঁচ নম্বর দাবিই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা।
কী নিয়ে এখনও অনড় জুনিয়র ডাক্তারেরা? চিকিৎসকেরা বলছেন, শেষ দুই দাবির সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি। জুনিয়র ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের দাবি তোলা হয়েছে। সে জন্য বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অন ডিউটি চিকিৎসকদের জন্য শৌচাগার এবং বিশ্রামকক্ষের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তারক্ষীর বন্দোবস্ত করার কথা বলেছেন তাঁরা। এ ছাড়াও, চিকিৎসকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা ক্যান্টিন খোলার দাবিও জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে চিকিৎসকদের উপর রোগীর আত্মীয়দের হামলার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করা হয়েছে। সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার দাবি জানানো হয়। হাসপাতালগুলোতে রোগী ‘রেফার’ করা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা নেই। তাতে নানা সময়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তা দূর করারও দাবি জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শীর্ষপদ থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তিদের অপসারণের দাবিও তোলা হয়। যৌন নির্যাতন বা মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থার বিষয় নিয়ে হাসপাতালে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তা নিয়েও সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের পরেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। ‘হুমকি সংস্কৃতি’ (থ্রেট কালচার) নিয়েও উঠতে শুরু করে বিভিন্ন অভিযোগ। সেই সংস্কৃতি মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে দূর করতে পদক্ষেপের দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুধু তা-ই নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিতেও সোচ্চার আন্দোলনকারীরা।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও এই সব বিষয়গুলি উত্থাপিত হয়েছিল। সূত্রের খবর, নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন মমতা। এ ছাড়াও, সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতেও রাজ্য সরকারের তরফে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।