তদন্তকারী সংস্থার প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিবিআইয়েরই বিশেষ আদালতের বিচারক। — ফাইল ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের গতি নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট। এ বার তদন্তকারী সংস্থার প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিবিআইয়েরই বিশেষ আদালতের বিচারক। অভিযুক্ত আবদুল খালেকের একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই। তা নিয়ে কী করা হল, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্নই তুললেন বিচারক।
আব্দুল খালেকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের কাছ থেকে যে ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা তাঁর ছেলের। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, ওই ল্যাপটপ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘ওই ল্যাপটপ নিয়ে কী করেছেন এত দিন?’’
সিবিআই যদিও বার বার জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আব্দুলের আইনজীবী সঞ্জয় তা মানতে চাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর মক্কেল আব্দুলের চার নম্বর মামলায় ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিবিআই আদালতে জানায় যে, ‘ইমেজিং’ নেবে। কিন্তু এখনও সেই কাজ এগোয়নি। এর পরেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারক। তিনি সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘২০ দিন ধরে ল্যাপটপ রেখে দিলেন। অভিযুক্তদের দোষ দিচ্ছেন যে, জামিন পেলে তাঁরা ম্যানিপুলেট করবেন। আপনারা যে ম্যানিপুলেট করে ফেলেননি, কী ভাবে জানব? ডিজিটাল এভিডেন্স নিতে গেলে যে সব প্রোটেকশন নিতে হয়, নেননি।’’
এত দিন ল্যাপটপ নিয়ে কী করেছে সিবিআই, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারক। সিবিআইয়ের পক্ষে বলা হয়, ওই ল্যাপটপ থেকে নথি ও প্রমাণ মিলেছে। এর পরেই সুর চড়ান বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘আমি ল্যাপটপের কথা জানতে চাইছি।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘ইমেজিং এবং নথি বার করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’’ বিচারক তখন পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘যে দিন বাজেয়াপ্ত করেছেন, তার পর দিন আবেদন করেননি কেন? এটাই আপনাদের তদন্তের প্রকৃতি? এত দিন পর আবেদন?’’
এখানেই থামেননি বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে আপনারা তদন্ত করছেন? প্রমাণ বিকৃত হলে কে দায়িত্ব নেবে?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী সুব্রত সামন্ত রায় জানিয়েছেন, সাক্ষীর সামনেই ল্যাপটপ সিল করে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন অভিযুক্তেরা। ভয় দেখাতে পারেন। তাই তাঁকে আপাতত হেফাজতে রাখা হোক। তখনই সিবিআইকে পাল্টা বিচারক বলেন, ‘‘আপনারা সাক্ষীকে নিরাপত্তা দিন।’’
সিবিআইয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত চন্দন (রঞ্জন) মণ্ডলের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যও। তিনি দাবি করেন, তাঁর মক্কেল কারও কাছ থেকে টাকা তুলেছেন, প্রমাণ দিতে পারেননি তদন্তকারীরা। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা দেখাতে পারেননি যে, রঞ্জন কারও কাছ থেকে টাকা তুলেছেন বা ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রিমান্ড দিয়ে বলেছে, চন্দন বিপুল টাকা তুলেছেন বাজার থেকে। চাকরির নাম করে। পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জানতে চেয়েছে, চন্দনের কাছ থেকে কী কী নথি বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। ওরা কিছু দেখাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত চন্দনের বিরুদ্ধে কিছু পায়নি।’’
আইনজীবী দিব্যেন্দু আরও বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের বক্তব্য, চন্দন কিছু লোককে চাকরি দিয়েছেন। যাঁদের চাকরি দিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি নাকি নেই! সেই প্রার্থীরা চন্দনের মাধ্যমে মিডলম্যান প্রসন্ন বা অন্য কারও কাছে যান। যদিও কোর্ট সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে।’’