ছাত্রেরা ক্লাসে ফিরলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এখনও অনুপস্থিত।
ক্লাস বয়কট প্রত্যাহার করে বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়ারা ক্লাস শুরু করেছেন। কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীরাও একই পথ ধরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ক্যাম্পাসমুখো হননি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও উপাচার্যের অনুপস্থিতি নিয়ে কার্যত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু উপাচার্য আসছেন না কেন? কেউ কেউ মনে করছেন, হয়তো তিনি শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নিগ্রহ দূর, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের আসা-যাওয়ায় বাধাও সৃষ্টি করবেন না তাঁরা। তা হলে উপাচার্যের অনুপস্থিতির কারণ কী হতে পারে? বৃহস্পতিবার এ নিয়ে দিনভর জল্পনা হয়েছে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িতদের একাংশের মতে, ছাত্র-শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বড় অংশ উপাচার্যের পদত্যাগ চাইছেন। আর উপাচার্যের পক্ষে একা বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র-শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু তাঁদের যে পাশে পাওয়া যাবে না, অভিজিৎবাবু সেটা টের পাচ্ছেন।
উপাচার্য নিজে কী বলেন? কেন তিনি আসছেন না, কবে আসবেন এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও তথ্য মেলেনি। আর টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ।
এ দিন ওয়েবকুপা-র সদস্য, যাদবপুরের কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়ে জানান, উপাচার্যের অবিলম্বে ক্যাম্পাসে আসা উচিত। পার্থবাবু পরে বলেন, “ওই শিক্ষকেরা বলেছেন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরার কথা বোঝাবেন। পাশাপাশি, তাঁদের মত, উপাচার্যের অবিলম্বে ক্যাম্পাসে যাওয়া উচিত।”
উপাচার্য ক্যাম্পাসে না গেলেও বিজ্ঞানের ডিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন জানান, ওই শাখার ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করেছেন। তবে তারা রোল কলে সাড়া দেননি। সুব্রতবাবু বলেন, “কিছু কর্মসূচি থাকায় শুক্রবার তারা ক্লাসে আসতে পারবে না বলে ওই পড়ুয়ারা জানিয়েছে। তবে শনিবার ক্লাস করবে।” কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও এ দিন বেশ কিছু ক্লাস হয়েছে।
ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কালো ব্যাজ পরে, গণ কনভেনশন করেন তাঁরা। ক্যাম্পাস জুড়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পোস্টার, লম্বা কালো কাপড়ে স্লোগান লিখে ঝোলানো হয়েছে অরবিন্দ ভবনের ছাদের উপর থেকে। বিকেলে যাদবপুর থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত মশাল মিছিলে যোগ দেন বহু ছাত্রছাত্রী। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে পড়ুয়ারা অনশন শুরু করেন ক্যাম্পাসে। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ অবশ্য বলেন, “এই কর্মসূচি নিয়ে আমার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কথা হয়নি।”
দুপুরে ক্যাম্পাসের ভিতরে মিছিল করে জুটা। তাদের দাবি, উপাচার্যকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। জুটার বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকে ছাত্রছাত্রীদের নির্বিচারে পেটানোর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করা তো দূর, এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানাননি। সেই কারণেই জুটা ওঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।