চার দিন সিআইডি হেফাজতে গোদালা

শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ) দুর্নীতি মামলায় ধৃত আইএএস অফিসার গোদালা কিরণ কুমারের জামিনের আর্জি বৃহস্পতিবার নাকচ করে দিল শিলিগুড়ি আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

শিলিগুড়ি আদালতে গোদালা কিরণ কুমার। বৃহস্পতিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ) দুর্নীতি মামলায় ধৃত আইএএস অফিসার গোদালা কিরণ কুমারের জামিনের আর্জি বৃহস্পতিবার নাকচ করে দিল শিলিগুড়ি আদালত।

Advertisement

বৃহস্পতিবার তাঁকে শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতে হাজির করে সিআইডি। এসিজেএম দেবাঞ্জন ঘোষ ওই আমলার জামিনের আর্জি নাকচ করে গোদালাকে ৪ দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি থেকে কৃষি দফতরের যুগ্মসচিব গোদালাকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। এ দিন সিআইডির তরফে আইনজীবী দীননাথ মোহান্ত আদালতে দাবি করেন, ময়নাগুড়িতে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ না করিয়ে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। হাওয়ালা মারফত সেই টাকা দক্ষিণ ভারতে পাচার হয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের কাছে গোপন জবানবন্দিও আছে বলে জানান তিনি।

গোদালার তরফে তড়িৎ ওঝা পাল্টা দাবি করেন, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সিসিটিভি দুর্নীতির মামলায় তাঁর মক্কেলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তদন্তের পর আদালতে জামিনও পান তিনি। এ বার অন্য একটি মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তড়িৎবাবুর দাবি, গোদালা কিরণ কুমার এসজেডিএ-র এগজিকিউটিভ অফিসার ছিলেন। বোর্ড যা সিদ্ধান্ত নিত তা তিনি পালন করতেন মাত্র। এক সময় ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য, রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। এখন রয়েছেন গৌতম দেব। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বোর্ড তাঁদের (ওই নেতাদের) বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থার কথা বলেনি। গোদালা দোষী হলে বোর্ডের অন্যদের আদালতে ডাকা হচ্ছে না কেন?’’ আইনজীবীর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে ‘কয়েকজন’কে আড়াল করতে ওই আমলাকে ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিলিগুড়ি আদালত ছিল পুলিশের ঘেরাটোপে। কমিশনারেটের তাবড় কর্তারা ছাড়াও শিলিগুড়ির লাগোয়া থানাগুলি থেকেও পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল আদালতে। সকালে গোদালাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের পরিবর্তে সিআইডি অফিসারেরা পিনটেল ভিলেজ থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুকনা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কৃষি দফতরের ওই যুগ্মসচিবকে ফের পিনটেল ভিলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলায় সেখান থেকেই তাঁকে আদালতে নিয়ে আসেন সিআইডি কর্তারা।


আদালতে গোদালার জন্য নিরাপত্তা।

অবিন্যস্ত চুল, ধূসর চশমার আড়ালেও তাঁর বিধ্বস্ত চেহারা ধরা পড়ছিল স্পষ্টই। আদালতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ত্রী সামান্যাও। আদালতে পৌঁছেই পরিচিত এক জনকে দেখে গোদালা তাঁর পরিবারেরও খোঁজ খবর নেন। তারপর পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেই আদালতে ঢুকে যান। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও তাঁর অস্থিরতা চোখ এড়ায়নি। কখনও ঠোট কামড়ে কখনও বা দাঁতে নখ কাটতে দেখা যায় ওই আমলাকে। বেলা আড়াইটা নাগাদ মামলার শুনানি শুরু হয়। ওই সময়ে অখিল বিশ্বাস, রতন বণিক সহ আদালতের ১০০ জন আইনজীবী আদালতে জনস্বার্থে আবেদন করে গোদালার জামিনের বিরোধিতা করেন। যদিও বিচারক তা গ্রহণ করেননি বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পর তাঁকে ফের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কোর্ট লকআপে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বিচারক গোদালাকে চার দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। মিনিট দশেকের মধ্যেই পুলিশি প্রহরায় ওই শীর্ষ আমলাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পিনটেল ভিলেজে।

এসজেডিএ দুর্নীতি মামলা সামনে আসার পরে তদন্তে নেমে মাস চারেকের মধ্যেই, ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর গোদালাকে গ্রেফতার করেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন। সেই সময়ে মালদহের জেলাশাসক ছিলেন গোদালা কিরণ কুমার। তবে গোদালাকে ধরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কমিশনারের পদ থেকে জয়রামনকে সরিয়ে কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়েছিল। গোদালা-গ্রেফতারের সব খবর শুনেছেন তিনি। তবে বলেছেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement