বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ‘দুর্নীতি’কে হাতিয়ার করতে চায় বিজেপি। তার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হবে সাংগঠনিক ‘পরীক্ষা’। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শনিবার এমনই ইঙ্গিত দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। তৃণমূল অবশ্য একে ‘সোনার পাথর বাটি’ বলে কটাক্ষ করেছে।
আজ, রবিবার রাজ্যের দুটি জায়গায় জনসভা করার কথা নড্ডার। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ও পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে সভা করার কথা তাঁর। সেই উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছন তিনি। রাজারহাটের যে হোটেলে তিনি রাত্রিবাস করবেন সেখানেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, দীপক বর্মণ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহপর্যবেক্ষক আশা লকরা ও অমিত মালবীয়ও।
তবে সিউড়িতে সভা করে অনেক রাতে বৈঠকে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তত ক্ষণে সুকান্তু বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। নড্ডার সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলেন শুভেন্দু।
সূত্রের খবর, বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উঠে এসেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য দল কতটা প্রস্তুত সে কথা নেতাদের থেকে জানতে চান নড্ডা। তিনি জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচন দলের কাছে সাংগঠনিক পরীক্ষা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলকে পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করতে হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বুথ স্তরে শক্তি যাচাই করে নিতে হবে। পঞ্চায়েতের আগে বুথ কমিটি গঠন হলে, লোকসভা নির্বাচনে কিছুটা এগিয়ে শুরু করা যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে নেতারা রাগঢাক না করে স্বীকার করে নেন, পঞ্চায়েতে এখনও সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার মত অবস্থায় নেই দল। যদিও সুকান্তের ব্যখ্যা, “আমরা সব জায়গাতেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করব। যেখানে দেব না, জানবেন না দেওয়ার জন্যই দিইনি।”
সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে দলের রণকৌশল ও প্রচারের অভিমুখও নির্দেশ করেছেন তিনি। দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বড় বিষয়। বিশেষ করে আবাস, ১০০ দিনের কাজ সহ বিভিন্ন গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি সরাসরি প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাই দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেই শাসক বিরোধী প্রচারকে জোরদার করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে শুধু নেতিবাচক প্রচার নয়, দল পঞ্চায়েতে জিতলে সাধারণ মানুষের জন্য কী করতে চায় সে বিষয়েও মানুষকে অবগত করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই তৃণমূলের দুর্নীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সেবামূলক প্রকল্পের প্রচারের কথাও তিনি বলেছেন। সেই জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে রাজ্য জুড়ে একটি সংকল্প পত্র তৈরির কথা আলোচনায় উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করা এবং তার সমাধানের জন্য বিজেপি কী করতে চায় তার বর্ণনা দিয়ে পঞ্চায়েত ভিত্তিক প্রচার পত্রও তৈরি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সুকান্ত বলেন, “জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত উপহার দেওয়াই বিজেপির লক্ষ্য।” পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, “সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম থাকা একজনকে বিরোধী দলনেতা করে ওরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে?”