চাহিদা কমেছে জয়নগরের মোয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
উপকরণের জোগানে কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু এ বছর করোনা আবহে মন্দার মুখে জয়নগরের মোয়ার ব্যবসা।
জয়নগরের মোয়ার সুনাম বিশ্বজোড়া। কনকচূড় ধান থেকে তৈরি খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড়, গাওয়া ঘি, খোয়া ক্ষীর, মধু, কিশমিশ, কাজু বাদাম মিশিয়ে তৈরি হয় জয়নগরের মোয়া। আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ু এলাকা হল এই মোয়ার আঁতুড়ঘর।
কারিগরেরা জানালেন, কনকচূড় ধান ও নলেন গুড়ই জয়নগরের মোয়ার মূল উপাদান। মোটামুটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুরের রস থেকে নলেন গুড় তৈরি হয়। আর বছরের সেই তিন-চার মাসই চলে এই মোয়ার ব্যবসা। ভিন্ রাজ্যে এবং অন্যান্য দেশেও পাড়ি দেয় জয়নগরের মোয়া।
কিন্তু এ বছর করোনার পরিস্থিতিতে ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে, কোথাওই মোয়ার তেমন চাহিদা নেই। মোয়া তৈরি হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তাঁরা জানালেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং বর্ধমান জেলার কয়েকটি এলাকায় কনকচূড় ধানের চাষ হয়। সেই খইয়ের স্বাদ অন্য কোনও ধরনের খইয়ের সঙ্গে তুলনীয় নয়। সেই কারণেই বহড়ু ও জয়নগরের মোয়া এত জনপ্রিয়। আগে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মোয়া পাড়ি দিত বিদেশে ও ভিন্ রাজ্যে। কিন্তু এ বছর বরাত নেই বললেই চলে।
ওই এলাকার ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষ ও বাবলু ঘোষ বললেন, ‘‘দেশ-বিদেশের অর্ডার তেমন নেই বললেই চলে। অনলাইনে ভিন্ রাজ্যের নামমাত্র অর্ডার এসেছে। প্রতি বছর এই চার মাসে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার মিষ্টি বিক্রেতারা এসে মোয়া কিনে নিয়ে যেতেন। টানা লকডাউনে সকলের অবস্থাই খারাপ। ক্রেতাদের হাতেও টাকা নেই। সেই কারণেই বিক্রি কমে গিয়েছে। অনেকে সংক্রমণেরও ভয় পাচ্ছেন। এখনও মাস দুয়েক রয়েছে। মন্দা কাটিয়ে ভাল ব্যবসার আশায় রয়েছি।’’
বহড়ুর মোয়া ব্যবসায়ী মহাদেব দাসের কথায়, ‘‘কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে খদ্দেররা আসতেন। ভিন্ রাজ্য বা বিদেশে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য মোয়া নিয়ে যেতেন অনেকে। তাঁরা আসার আগেই ফোনে আমাদের অর্ডার দিয়ে দিতেন। কিন্তু এ বছর তেমন কোনও অর্ডারই আসছে না।’’
লকডাউনে মিষ্টির ব্যবসা এক রকম বন্ধই ছিল। আনলক-পর্বে মোয়া বেচে লাভ হবে বলে আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মরসুমের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যবসা না হওয়ায় হতাশ তাঁরা। মোয়া ব্যবসায়ী বাবলু ঘোষ বললেন, ‘‘ঠান্ডাটা কয়েক দিন জাঁকিয়ে পড়েছে। আশা করি, মোয়ার ব্যবসা ভাল হবে। এখনও তো দিন ফুরোয়নি।’’
বহড়ুর বাজারে জয়নগরের মোয়ার দাম এ বার কিছুটা কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এক ব্যবসায়ী জানালেন, ‘সুপার স্পেশ্যাল’ মোয়া সাড়ে পাঁচশো টাকা কেজি। তা ছাড়া, সাড়ে চারশো বা সাড়ে তিনশো টাকার মোয়াও আছে। কিন্তু বাজার মন্দা বলে ২০০ টাকা কেজি দরেও অনেকে মোয়া বিক্রি করছেন। তা অবশ্য গুণমানে তত ভাল নয়। কিন্তু কম দামে ক্রেতার হাতে মোয়া তুলে দেওয়ার জন্যই তা তৈরি করা হয়েছে।