হাতি করিডরের তথ্যই নেই, উঁচু হয়নি তার

হাইটেনশন তারের উচ্চতা বাড়াতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুরোধ করেছে বন দফতর। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা হাতিদের যাতায়াতের পথের (এলিফ্যান্ট করিডর) তালিকা চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪৬
Share:

ঝুলে থাকা হাইটেনশন তারেই তিনটি হাতির মৃত্যু হয় কাঁকোয়। নিজস্ব চিত্র

আর কত প্রাণহানির পর জঙ্গলপথে হাইটেনশন লাইনের উচ্চতা বাড়বে! বিনপুরের কাঁকো অঞ্চলের সাতবাঁকি গ্রামে তিনটি হাতি, (যার মধ্যে দু’টি স্ত্রী হাতিই আসন্নপ্রসবা) মৃত্যুর পরে ফের সামনে আসছে পুরনো প্রশ্ন। উচ্চতা বাড়াতে আগ্রহী বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাও। তবে ঝাড়গ্রাম জেলায় কত এলাকা জুড়ে হাতির করিডর রয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য নেই তাদের কাছে।

Advertisement

হাইটেনশন তারের উচ্চতা বাড়াতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুরোধ করেছে বন দফতর। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা হাতিদের যাতায়াতের পথের (এলিফ্যান্ট করিডর) তালিকা চাওয়া হয়েছে। বন দফতরের বক্তব্য, ঝাড়গ্রাম জেলার সব এলাকাই এখন হাতির গতিবিধির মধ্যে রয়েছে। ফলে হাইটেনশন লাইনগুলির নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রাখা খুবই জরুরি, যা অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না।

ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকেই কমবেশি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্ট ও ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন গিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দলমার প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবর্তন হওয়ায় এখন বারো মাসই পরিযায়ী হাতিরা ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। পরিযায়ী দলের কিছু হাতি আবার স্থায়ী ভাবে এলাকায় থেকে গিয়ে রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলগুলিতে বিভিন্ন সময়ে হাতির গতিবিধি রয়েছে। হাতিদের যাতায়তের পথে (এলিফ্যান্ট করিডোর) জঙ্গলে এবং নন-ফরেস্ট এলাকায় রয়েছে হাইটেনশনের তার। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী জেলার ৮টি ব্লক জুড়ে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ হাইটেনশনের তার রয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, এত দীর্ঘ কয়েক হাজার কিলোমিটার হাইটেনশন তার হাতির নাগালের থেকে উঁচু করতে বিপুল অর্থ প্রয়োজন। ওই কাজ করাও দুঃসাধ্য। তাই যে সব এলাকা দিয়ে হাতির দল যায়, সেখানকার হাইটেনশনগুলি উঁচু করার পক্ষপাতী বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তবে একটি বিষয়ে অস্বস্তি শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। জেলায় কয়েক দশক ধরে হাতির দলের গতিবিধি থাকলেও কত বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাতিদের করিডর রয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও তথ্যই নেই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে। গাফিলতি রয়েছে বন দফতরেরও। হাতির গতিবিধির এলাকার তালিকা আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে জানায়নি বন দফতর।

Advertisement

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পশ্চিম মেদিনীপুরের রিজিওনা‌ল ম্যানেজার কমল মাইতি বলেন,‘‘বিভিন্ন বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে হাইটেনশন লাইনগুলির নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রাখার কাজ শুরু হয়েছে।’’ বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘হাতির করিডরের তথ্য না থাকায় পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলাইচ্চি বলেন, ‘‘হাতিরা জঙ্গলের যে কোনও দিকেই যেতে পারে। তাই হাইটেনশন লাইনগুলির নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রাখার জন্য বিদ্যুৎ দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, ১১ হাজার ভোল্টের লাইন মাটি থেকে ১৪ ফুট উঁচুতে থাকে। ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন মাটি থেকে ১৬ ফুট উঁচুতে থাকে। পূর্ণবয়স্ক হাতির উচ্চতা সর্বোচ্চ ৯ ফুটের কাছাকাছি। তার থেকে আরও ফুট তিনেক উচ্চতায় শুঁড় তুলতে পারে হাতি। তবে প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমরদার অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছেন, অনেক জায়গায় হাইটেনশন তার নির্দিষ্ট উচ্চতায় থাকে না। তার ফলেই বিপত্তি ঘটে। সমীরের মতে, ‘‘হাতির গতিবিধির এলাকায় হাইটেনশনের লাইন মাটি থেকে ১৬ ফুট উঁচুতে থাকাটা সবচেয়ে নিরাপদ। তবে নিয়মিত লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।’’ ঝড়ে অনেক সময় খুঁটি হেলে তার ঝুলে যায়। অতিবৃষ্টিতে মাটি নরম হয়েও খুঁটি হেলে যায়। হাইটেনশন তারের একটি খুঁটি থেকে ৫০ মিটার দূরে পরবর্তী খুঁটি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চাষজমি দিয়ে লাইন নিয়ে যাওয়ার সময় জমি মালিকের আপত্তিতে ৫০মিটারের বেশি দূরত্বে খুঁটি দিতে হয়। সাতবাঁকির দুর্ঘটনাস্থলে ঝুলে থাকা তারের দু’টি খুঁটির মধ্যে দূরত্ব ছিল ৭০ মিটারেরও বেশি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement