ঝালমুড়ি সামলাতে সক্রিয় নির্মলা, নরম রূপা

ঝালমুড়ি কাণ্ডে প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র পাশে দাঁড়ালেন আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দু’দিন ধরে রাজ্য বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এবং পরে সোমবার প্রকাশ্যে ঝালমুড়ি বিতর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নির্মলা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র এবং রাজ্যের সম্পর্ক সহযোগিতামূলক হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে, এ রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূলকে কোনও ছাড় দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৪:০৪
Share:

বাবুল বিতর্কে মুখে কুলুপ। সোমবার দলীয় মিছিলে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

ঝালমুড়ি কাণ্ডে প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র পাশে দাঁড়ালেন আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দু’দিন ধরে রাজ্য বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এবং পরে সোমবার প্রকাশ্যে ঝালমুড়ি বিতর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নির্মলা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র এবং রাজ্যের সম্পর্ক সহযোগিতামূলক হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে, এ রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূলকে কোনও ছাড় দেওয়া হবে।

Advertisement

লোকসভা ভোটের সময় থেকে বাবুল বারবার তৃণমূল নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকারের নানা আক্রমণের মুখে পড়়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি মমতা বাবুলকে ঝালমুড়ি খাওয়ানোয় এবং বাবুল আপেক্ষিকতাবাদের আলোয় মমতার প্রশস্তি করায় তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে নতুন সমীকরণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজ্য বিজেপি-র বড় অংশের আশঙ্কা, বাবুল-সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মমতা-প্রশস্তি চলতে থাকলে রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই ধাক্কা খাবে। ওই আশঙ্কার কথা রবিবার এবং এ দিনের দলীয় বৈঠকে নির্মলাকে জানান কয়েক জন বিজেপি নেতা। দলীয় সূত্রের খবর, নির্মলা তাঁদের অভিযোগে আমল দেননি। জানিয়েছেন, ওটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভাবার বিষয়। রাজ্য নেতারা বরং আন্দোলন এবং সংগঠন বিস্তারে মন দিন।

বৈঠকের পরে এ দিন বাবুল-বিতর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নির্মলা বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্য এবং কেন্দ্রের সম্পর্ক থাকে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে দু’পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতা দরকার। তার থেকে বেশি কিছু নয়। তৃণমূলই মূল রাজনৈতিক শত্রু। লড়াই যেমন চলছে, চলবে।’’ লড়াইয়ের পথ রাজ্য নেতৃত্বই ঠিক করবেন বলে নির্মলা জানান। কিন্তু বাবুলের মন্তব্যে কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে না? নির্মলার জবাব, ‘‘কোনও বিভ্রান্তি নেই। দলের সংগঠন শক্তিশালী করাই আমাদের কাজ।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, বাবুলের মমতা-প্রশস্তিকে কটাক্ষ করে প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন বিজেপি-র অভিনেত্রী-নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তার ধারাবাহিকতায় টলিউড থেকে আসা আর এক বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বাবুলের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ভাবে ঘরের কোন্দল বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে রবিবার এই চাপানউতোরকে ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ বলে বিতর্কে যবনিকা টানতে চেয়েছিলেন রাহুলবাবুই। এ দিন রূপাও এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ক্লোজড চ্যাপ্টার।’’ কিন্তু বাবুলের মন্তব্যে কি বিজেপি কর্মীদের মনোবলে আঘাত লাগছে না? রূপার জবাব, ‘‘বাবুল তো ভাল ভাল কথা বলেছে! মনোবলে আঘাত করবে কেন?’’ রূপা যে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব বাইরে প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নির্মলা বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি নিয়ে মন্তব্য করব না।’’

বিজেপি নেতারা অস্বস্তি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাবুলের আচরণের ছায়া পড়েছে এ দিন বিধানসভার অধিবেশনেও। বক্তার তালিকায় নাম না-থাকা সত্ত্বেও বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যকে উচ্চশিক্ষা বিল নিয়ে বিধানসভায় বলতে দেওয়ার জন্য স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময়ে বাম বিধায়কদের আসন থেকে অবশ্য সমস্বরে কটাক্ষ উড়ে আসে— ‘‘ঝালমুড়ি, ঝালমুড়ি।’’ শমীকবাবু অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে বলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement