জীবন সিংহ। ফাইল চিত্র।
আগামী ২৮ অগস্ট কোচবিহারের ভারত ভুক্তির ৭৩ বছর। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে ফের কোচ রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে অডিয়ো বার্তা দিলেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহ (অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। শুক্রবার ওই বার্তায় জীবন দাবি করেন, কোচবিহার রাজ্যের ভারতভুক্তির সময়ে যে চুক্তি হয়, তা মানা হয়নি। কোচবিহার তথা কোচ-কমতাপুর রাজ্য তাই এখনও পরাধীন। তিনি কোচ-কমতাপুর রাজ্যের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দেন। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন, যারা এখানে থেকে কোচ-কমতাপুরের বিরোধিতা করছে, তাদের উৎখাত করা হবে। মনে করা হচ্ছে, নাম না করে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নেতাদেরই। কারণ, আলাদা রাজ্যের দাবির বিরোধিতা করে তৃণমূলই বারেবারে ময়দানে নেমেছে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা পার্টির চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘যে কেউ আলাদা রাজ্যের দাবি করতেই পারেন। কিন্তু সেই দাবি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তোলা উচিত। বন্দুক হাতে ভয় দেখানোর চেষ্টা ঠিক নয়। যারা বন্দুক হাতে রাজনীতি করছে, আমরা তাদের বিরোধী।’’
অনন্ত মহারাজও সম্প্রতি পৃথক বৃহত্তর কোচবিহার রাজ্যের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবিত স্বশাসিত বা কেন্দ্রশাসিত বৃহত্তর কোচবিহারের মধ্যে রয়েছে অসমের গোয়ালপাড়া, ধুবুড়ি, চিরাং, কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁও ও দক্ষিণ শালমারা জেলাও। তার সঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বাদে উত্তরাংশের বাকি সাতটি জেলাকেও (কালিম্পং-সহ) জুড়ে বৃহত্তর কোচবিহারের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে অনন্ত জানান, কোচবিহার রাজ্য গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অনন্তের এই দাবির তীব্র বিরোধিতা এসেছে পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম, দুই রাজ্য থেকেই। ‘অল ইন্ডিয়া বড়ো পিপলস্ ন্যাশনাল লিগ ফর বড়োল্যান্ড স্টেটহুড’ সংগঠনের সভাপতি চাঞ্চুমা বিসমুতিয়ারি বলেন, “বড়ো চুক্তির নামে বড়োদের ঠকানো হয়েছে। এর পর বড়োভূমির অঙ্গচ্ছেদ করে কোচবিহার গঠন মানা হবে না।” বড়োল্যান্ড জনজাতি সুরক্ষা সমিতির কার্যবাহী সভাপতি দাওরাব দেখ্রব নার্জারিও বলেন, “স্বঘোষিত কোনও রাজার অবান্তর কথায় বিশ্বাস করা উচিত নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম নিয়ে মিথ্যে বলছেন অনন্ত।’’ একই বক্তব্য কামতাপুর স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী সদস্য গোকুল বর্মণেরও। বঙ্গাইগাওঁয়ের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ফণীভূষণ চৌধুরী জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি অসম ভেঙে কোচবিহার বা কমতাপুর গঠনের বিরোধী। তেমন হলে অসমে আইন-শৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে।
অন্য দিকে, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বঙ্গ বিভাজন হতে দেবেন না।’’ যা শুনে কেএলও প্রধান জীবন সিংহের ধর্মপুত্র দিবাকর দেবরাজ সিংহের পাল্টা বক্তব্য, “রাজনীতির স্বার্থে কোনও পক্ষ যেন সেই পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।”