জয়শ্রী টেক্সটাইলস। —ফাইল চিত্র।
দু’মাস পরে রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস কারখানা খোলার প্রক্রিয়া অনেকটাই এগোল। রাজ্য শ্রম দফতরে শনিবার বিকেল থেকে রাতভর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ওই ইঙ্গিত মেলে। আজ, সোমবার শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনারের দফতরে শ্রমিক সংগঠন এবং মালিকপক্ষের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা সংক্রান্ত পাঁচ বছরের চুক্তি সই হওয়ার কথা। তার পরে মঙ্গলবার থেকে ফের খুলতে পারে কারখানার দরজা।
শ্রীরামপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সুকান্ত রায়চৌধুরী জানান, স্বাক্ষর প্রক্রিয়া মিটলেই উৎপাদন চালু হবে বলে বৈঠকে ঠিক হয়েছে। কারখানার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সোমবার চুক্তি সই হলে মঙ্গলবারেই কারখানা খুলবে। দু’মাসে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে, শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস করা হবে না।’’
শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। ছিলেন রাজ্যের সহকারী শ্রম সচিব রিনা টারজান, রামপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সুকান্তবাবু, কারখানার দুই কর্তা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ চৌধুরী এবং কারখানার আটটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি।
আইএনটিটিইউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় ১৫ ঘণ্টার বৈঠকে সব সমস্যার সমাধান হল।’’ এআইটিইউসি নেতা দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যতটা আশা করেছিলাম, তার পুরোটা না হলেও ঐক্যবদ্ধ ভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর এই কারখানায় শ্রমিকের সংখ্য প্রায় পাঁচ হাজার। তাঁদের সঙ্গে বিরোধের গত ২৫ জুন কারখানা ‘লক-আউট’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তার আগে ৪ জুন থেকে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত ৩১ মে সন্ধ্যায় দুই শ্রমিকের বিরুদ্ধে সুপারভাইজারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। তার জেরে পাঁচ শ্রমিককে সাসপেন্ড করা হয়।
একতরফা সিদ্ধান্তের অভিযোগে এবং সহকর্মীদের কাজে ফেরানোর দাবিতে ৪ এপ্রিল থেকে সমস্ত শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দেন। ওই দিন আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা দাবি তোলেন, অভিযুক্ত শ্রমিকদের পাশাপাশি গত বছর বহিষ্কৃত ন’জনকেও কাজে ফেরাতে হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবারের বৈঠকেও একই দাবি তোলে শ্রমিক সংগঠনগুলি। মালিকপক্ষ জানিয়ে দেয়, গত বছর বহিষ্কৃত শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। ঠিক হয়, ৪ জুন যে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের সতর্ক করে কাজে ফেরানো হবে। সুপারভাইজারকে মারধরে অভিযুক্ত দুই শ্রমিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অপর তিন শ্রমিককে স্বল্প শাস্তি দিয়ে কাজে নেওয়া হবে। শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস, মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠক শেষ হতে রবিবার সকাল ৬টা বেজে যায়।