থমকে: বি টি রোডের পরিস্থিতি এমনই। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
চওড়া হওয়ার পরে কিছু দিন বেশ নির্বিঘ্নেই গাড়ি চলাচল করছিল বিটি রোডে। বেড়েছিল গতিও। কিন্তু দু’-এক বছরের মধ্যেই কার্যত আবার সেই পুরনো যানজটের ছবিই ফিরে এসেছে সেখানে।
অনেক ক্ষণ ধরে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, দূষিত ধোঁয়ায় দমবন্ধ করা বাতাস, বাধ্য হয়েই মুখ ঢাকতে ব্যস্ত পথচারীতে ভর্তি রাস্তার দু’পাশে সমানতালে রয়েছে বাস, লরি, ট্যাক্সির বেআইনি পার্কিং। সঙ্গে রয়েছে দিয়ে দখলদারি ঝুপড়ি। এমনকী রাস্তার এক পাশ দখল করে তৈরি করা হয়েছে নোংরা ফেলার ভ্যাটও। প্রশাসন, পুলিশ সবই আছে। কিন্তু ভিড়ে আর বিশৃঙ্খলায় ক্রমেই কমছে গাড়ির গতি।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তার দু’ধারে বেআইনি পার্কিং বেড়েই চলেছে। এই পার্কিং বেশি রয়েছে ডানলপের পরের অংশে। সঙ্গে রয়েছে রাস্তার ধারের বহু ঝুপড়ি। ফলে রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে পাশ দিয়ে পথচারীদের যাওয়ার রাস্তা মিলছে না। তার উপর সন্ধ্যা হলে, চলন্ত অবস্থায় রাস্তায় আটকে থাকা গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে ধুলোবালি মিশে এমন ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে, যে ভাল করে পথই দেখা যাচ্ছে না।
বিটি রোডে যানজটের পিছনে অবশ্য গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকেই দুষছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, দিনে প্রায় কয়েক লক্ষ গাড়ি চলাচল করে বিটি রোড দিয়ে। সব থেকে ভিড় হয়ে যায় ডানলপ মোড়ে। কারণ, এই মোড় দিয়েই একাধিক দিকে এমনকী বাংলাদেশমুখী ট্র্যাফিকও চলাচল করে। ফলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত এই ডানলপ রাস্তা এক বার আটকে গেলেই বিটি রোডে সার বেঁধে গাড়ি আটকে পড়ছে। আর ওই জট ছাড়াতে অনেক সময় লাগছে।
প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে হু হু করে আবাসনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যারাকপুর মহকুমাতে লোক সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে অনেক। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যাও। ছোট, বড় মিলিয়ে সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ হাজার নতুন গাড়ি ঢুকছে এই মহকুমায়। ফলে বিটি রোড-সহ অন্যান্য রাস্তাতেও ক্রমে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন স্তরে চলছে আলোচনা। বিটি রোডকে আরও চওড়া করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, লরি চলাচল নিয়ে কলকাতা, চন্দননগর এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেট একসঙ্গে বসে আলোচনা করে লরি চলাচলের সময় ঠিক না করলে এই যানজট কমানো প্রায় অসম্ভব। কারণ, তিন পুলিশ প্রশানের লরি ছাড়ার সময় এক এক রকম। এটা সমস্যার একটা বড় কারণ।
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘ডানলপে একটি উড়ালপুল তৈরি করা হয়েছে। সেটি দিয়ে হুগলির দিক থেকে কলকাতামুখী গাড়িগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হুগলিমুখী গাড়ির চাপ কমাতে আরও একটি উড়ালপুল প্রয়োজন।’’ যদিও ব্যারাকপুরের বিদায়ী পুলিশ কমিশনার সুব্রত মিত্র বলেন, ‘‘উৎসবের মরসুম বলে গাড়ির চাপ একটু বেশি হচ্ছে। উৎসব শেষ হলেই অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’ রাস্তার পাশে বেআইনি পার্কিং এবং ঝুপড়ি সরানো নিয়েও ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে প্রশাসনে।